হুন্ডিতে টাকা পাঠানো সম্পূর্ণ অবৈধ বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সিআইডি বলছে, বর্তমানে অনেক প্রবাসী হুন্ডিতে দেশে স্বজনদের টাকা পাঠাচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। প্রবাসীরা হুন্ডিতে টাকা পাঠালে তার স্বজনরা আইনি ঝামেলায় পড়তে পারেন।
সিআইডি জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ ৭.৮ বিলিয়ন ডলার হুন্ডি ব্যবসায়ীরা। মোবাইল ব্যাংকিং বা মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় ব্যবহার করে অর্থপাচার হচ্ছে। সিআইডি হুন্ডি নিয়ে তদন্ত করছে, তদন্তের প্রয়োজনে হুন্ডির টাকা গ্রহণকারীদেরও আইনের মুখোমুখি করা হতে পারে।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান সিআইডি প্রধান মোহাম্মদ আলী মিয়া। হুন্ডির মাধ্যমে অর্থপাচারের ঘটনায় ১৬ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এসময় সিআইডি প্রধান বলেন, যারা বিদেশ থেকে অবৈধপথে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন এবং দেশ থেকে টাকা গ্রহণ করছেন তাদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি সিআইডি মনিটরিং করছে। আমার ধারণা, কোনো প্রবাসী চাইবেন না অবৈধ পথে টাকা পাঠানোর জন্য তার স্বজন আইনের মুখোমুখি হোক।
ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন অভিযান চালিয়ে হুন্ডি কারবারিদের গ্রেপ্তার করা হয়নি- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত না পাওয়ার কারণে ধরা যায়নি৷ সিআইডির গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গোয়েন্দা তথ্যে মিল পাওয়ার ভিত্তিতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসময় সাংবাদিকরা জানতে চান সরকারি প্রণোদনার পরও বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা না পাঠিয়ে অবৈধভাবে কেন টাকা পাঠাচ্ছে। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে আমাদের একটি মিটিং হয়েছে। আমার বিশ্বাস এর একটি সুষ্ঠু সমাধান হবে।
তিনি বলেন, মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্ট অবৈধ কার্যক্রম করছে। আমরা টার্গেট করে তিনটি গ্রুপকে ধরেছি। ইতোমধ্যে যারা অবৈধ কার্যক্রম পরিচালনা করেছিল সিআইডির তৎপরতায় সেখান থেকে তারা সরে আসতে শুরু করেছে।
আমরা ইন্টেলিজেন্স বেইজড অপারেশন পরিচালনা করি। সিআইডি ৫ হাজার মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস এজেন্টদের নজরদারির মধ্যে রেখেছে। দু-একদিনের মধ্যে অবৈধ লেনদেন ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বিকাশ, রকেট, নগদ ছাড়াও যেসব মোবাইল ফাইনান্সিয়াল সার্ভিস রয়েছে তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে মিটিং করিনি। আনুষ্ঠানিকভাবে মিটিং না করার কারণ ইন্টেলিজেন্স যাতে ফাঁস না হয়।
১৬ জনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে তাদের মাধ্যমে গত চার মাসে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা পাচার হয়েছে। এছাড়াও এমএফসের মাধ্যমে হুন্ডি করে এমন ৫ হাজারের বেশি এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে সিআইডি।
প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি, তারা এমএফএস সেবা বিকাশ, নগদ, রকেট ও উপায় ব্যবহার করে হুন্ডির সঙ্গে জড়িত। এই ৫ হাজার এজেন্ট গত চার মাসে ২৫ হাজার কোটি ও গত এক বছরে ৭৫ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।
গ্রেপ্তার ১৬ জনের মধ্যে ৬ জন বিকাশ এজেন্ট, ৩ জন বিকাশের ডিস্ট্রিবিউটর সেলস অফিসার, ৩ জন বিকাশের ডিএসএস, ২ জন হুন্ডি এজেন্ট, একজন হুন্ডি এজেন্টের সহযোগী ও একজন হুন্ডি পরিচালনাকারী।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এসব চক্র প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে এমএফএস ব্যবহার করে ক্যাশ ইনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হুন্ডি করছে। এমএফএস এজেন্টদের সহযোগিতায় পাচারকারীরা বিদেশে স্থায়ী সম্পদ অর্জনসহ অনলাইন জুয়া, মাদক কেনাবেচা, স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ব্যবসাসহ প্রচুর অবৈধ ব্যবসাও পরিচালনা করছে।সিআইডিপ্রধান বলেন, এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড দেশি ও বিদেশি মুদ্রাপাচার মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ২(শ) (১৪) ধারা অনুযায়ী অপরাধ, যা একই আইনের ৪(২)-এর ধারায় দণ্ডনীয়। এ বিষয়ে মামলা রেকর্ডসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।