সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গাজায় ৫৯ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। চলতি বছরের মার্চের শুরুতে ইসরায়েল পূর্ণ অবরোধ আরোপ করে এবং দুই সপ্তাহ পর আবারও হামলা শুরু করে। ফলে দুই মাসের যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ে। বর্তমানে গাজায় খাবার, ওষুধ ও জ্বালানির ঘাটতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গাজাবাসীদের অধিকাংশই একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ৯০ শতাংশের বেশি ঘরবাড়ি আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
শুক্রবার গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অপুষ্টিজনিত কারণে আরও ৯ জন মারা গেছেন, যা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এমন মৃত্যুর সংখ্যা ১২২-তে পৌঁছেছে।
ইসরায়েল গাজায় সবধরনের সরবরাহের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে দাবি করছে, তারা কোনো বাধা দিচ্ছে না এবং এর জন্য উল্টো হামাসকেই দায়ী করেছে।
শুক্রবার এক ইসরায়েলি নিরাপত্তা কর্মকর্তা বিবিসিকে জানিয়েছেন, গাজায় সহায়তা সরবরাহের জন্য আকাশপথে খাদ্য ফেলা হতে পারে— যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলো এটিকে খুবই অকার্যকর পদ্ধতি বলে উল্লেখ করেছে।
স্থানীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং জর্ডান এই আকাশপথে সহায়তা সরবরাহ করতে পারে। তবে জর্ডানের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, ইসরায়েল এখনো তাদের সেনাবাহিনীকে এর জন্য অনুমতি দেয়নি। জাতিসংঘ এই পদক্ষেপকে ‘ইসরায়েল সরকারের নিষ্ক্রিয়তার পর্দা’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
শুক্রবার জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য একটি যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলকে ‘অবিলম্বে গাজায় অবরোধ তুলে নেওয়ার’ আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া তারা গাজায় চলমান ‘মানবিক বিপর্যয়’ অবসান এবং যুদ্ধ বন্ধের দাবিও জানিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ইসরায়েলকে অবশ্যই আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুসরণ করতে হবে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদাসীনতা, মমত্বহীনতা এবং সত্য ও মানবতার অভাবের কোনো ব্যাখ্যা আমি দিতে পারছি না।’
তিনি জানান, ২৭ মে— যেদিন থেকে মার্কিন ও ইসরায়েল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) জাতিসংঘের বিকল্প হিসেবে খাদ্য বিতরণ শুরু করে তখন থেকে ১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে শুধু খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে।
‘আমি খুব ক্লান্ত’, না খেয়ে থাকা এক শিশুর মায়ের আকুতি
এক মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তা, যিনি গত মে ও জুনে জিএইচএফের হয়ে কাজ করেছিলেন, বিবিসিকে বলেন, ‘আমি নিশ্চিতভাবে যুদ্ধাপরাধ প্রত্যক্ষ করেছি।’ অ্যান্থনি আগুইলার নামে ওই সাবেক সেনা জানান, ইসরায়েলি বাহিনী এবং মার্কিন ঠিকাদাররা খাবার বিতরণের সময় বেসামরিকদের ওপর সরাসরি গুলি, মর্টার শেল, কামান ও ট্যাংকের গোলা ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমার পুরো ক্যারিয়ারে আমি কখনো এমন নির্মমতা দেখিনি।’
তবে জিএইচএফ দাবি করেছে, এক মাস আগে অসদাচরণের কারণে বরখাস্ত করায় অসন্তুষ্ট হয়ে এমন অভিযোগ করেছেন অ্যান্থনি। তার অভিযোগগুলো ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলেও দাবি প্রতিষ্ঠানটির।
যুদ্ধবিরতির আলোচনা অনিশ্চিত
নতুন যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির আলোচনা আবার অনিশ্চয়তায় পড়েছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল কাতার থেকে তাদের আলোচনা দল প্রত্যাহার করে নিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘হামাস আসলে সমঝোতা চায় না… আমি মনে করি তারা মরতে চায়।’
হামাস এই মন্তব্যের জবাবে জানায়, কাতার থেকে এখনো বার্তা এসেছে যে আলোচনা ভেঙে পড়েনি এবং ইসরায়েলি প্রতিনিধিরা আগামী সপ্তাহে দোহায় ফিরে আসবে।