মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি,
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় নিখোঁজের তিন সপ্তাহ পার হলেও সন্ধান মেলেনি এক স্কুল শিক্ষার্থী শিশুর। গত ২০ আগস্ট রোববার দুপুরে তার বন্ধুরা খেলার কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই নিখোঁজ হয় সে। এখন পর্যন্ত শিশুটির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
নিখোঁজ শিশুটির নাম অপূর্ব আলামিন (১২)। সে সাটুরিয়া উপজেলার তিল্লি ইউনিয়নের তজবিডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। অপূর্ব স্থানীয় তিল্লী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র ছিল।
ঘটনার পর থেকে তার পরিবার বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও কোন সন্ধান পায়নি। পরে সাটুরিয়া থানায় অভিযোগ দিলে সেটা না নেওয়ায় অপূর্বর বাবা আব্দুল মালেক গত ৩ সেপ্টেম্বর সাতজনকে আসামী করে আদালতে একটি সি.আর মামলা করেন।
মামলার সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন দুপুরে মো. আক্কাস, সিদ্দিকুর রহমান, জুলেখা বেগম ও মো. শামীম নিখোঁজ অপূর্ব আলামিনকে তার খেলার সাথী স্বাধীন, আব্দুল্লাহ ও সিয়ামের মাধ্যমে বাড়ী থেকে খেলার উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে যায়। অপূর্ব তার বন্ধুদের সাথে খেলতে চলে যায়। ঘটনার সময় অপূর্বর বাবা মালেক মানিকগঞ্জে ছিলেন। তিনি বাড়ি ফিরে ছেলেকে দেখতে না পেয়ে তার স্ত্রী ও মাকে জিজ্ঞেস করে অপূর্ব কোথায়? তারা জানান অপূর্বকে খেলার জন্য স্বাধীন, আব্দুল্লাহ ও সিয়াম ডেকে নিয়ে গিয়েছে। একটু পরেই প্রতিবেশী আমেনা বেগম এসে জানায় যে, তিল্লী ব্রীজের নিচ থেকে অপূর্বকে পাওয়া যাচ্ছে না। সাথে সাথেই মালেক তিল্লী ব্রীজের নিচে যান। সেখানে মো. আক্কাস, স্বাধীন, আব্দুল্লাহ ও সিয়ামকে দেখে মালেক জিজ্ঞেস করেন আমার ছেলে অপূর্ব কোথায়? তখন তারা এলোমেলো কথাবার্তা বলতে থাকেন। এক পর্যায়ে সিয়াম জানায় যে, আমরা জঙ্গলে পালিয়ে ছিলাম। তারপর থেকে অপূর্বকে পাওয়া যাচ্ছে না। আব্দুল মালেকের ধারণা সকলে একত্রিত হয়ে একই উদ্দেশ্যে মো. আক্কাস, সিদ্দিকুর রহমান, জুলেখা বেগম ও মো. শামীম তার ছেলেকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরন করে তিল্লী ব্রীজের আশপাশে কিংবা অন্য কোথাও নিয়ে হত্যা করে লাশ গুম করেছে। বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করেও অপূর্বকে না পাওয়া গেলেও তার পরনের গেঞ্জি, হাফ প্যান্ট ও জুতা তিল্লী ব্রীজের নিচে জঙ্গলের কাছে পাওয়া গেছে।
অপূর্বর বাবা আব্দুল মালেক জানান, ‘মো. আক্কাস, সিদ্দিকুর রহমান, জুলেখা বেগম ও মো. শামীমের সাথে আমার জমি সংক্রান্ত ও রাস্তার বিষয় নিয়ে পারিবারিক শত্রুতা আছে। এ বিষয় নিয়ে আক্কাস আমার বিরুদ্ধে আদালতে ৬ আগস্ট একটি মিথ্যা মামলা করে। তারা আমার ক্ষতি করার জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা ফন্দিফিকির করে আসছে। ওই মামলা করার কয়েকদিন পর আক্কাস আমাকে হুমকি দেয় আমার বংশ নিরবংশ করে দিবে। তার কয়েকদিন পরেই আমার ছেলে নিখোঁজ হয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকেই লোকমারফত তারা আমাকে নানাভাবে মামলা না করে আপোষ করার প্রস্তাব দেয়। আমি সেই প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় আমাকে হুমকি দেয় এবং এলাকায় লোক ভাড়া করে উল্টো আমার বিরুদ্ধেই ৪ সেপ্টেম্বর মানববন্ধন করে। মানববন্ধন শেষে লোকজন নিয়ে আমার বাড়ী এসে হুমকি দেয় মামলা তুলে নেওয়ার জন্য। এছাড়া তারা বলে এলাকার বড় বড় মাথাই আমাদের সাথে তুই কিছুই করতে পারবিনা। এ ঘটনার পর থেকে আমি আমার পরিবার নিয়ে খুব শঙ্কায় আছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘ঘটনার পরদিন বিকেলে সাটুরিয়া থানা থেকে ওসি মহোদয়সহ কয়েকজন পুলিশ তিল্লী ব্রিজের নিচে তদন্তের জন্য আসেন। সেখানে এলাকাবাসীসহ তিল্লী ইউনিয়নের চেয়ারম্যানও ছিলেন। একটু পরেই ওসি মহোদয়ের কাছে খবর আসে সদর উপজেলার চরবালিরটেক এলাকায় একটি শিশুর লাশ পাওয়া গেছে। ওই কথা শুনে আমার আত্মীয়স্বজন ও চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে যেয়ে শনাক্ত করেন লাশটা অপূর্বর না। পরেরদিন আমার বোন মর্জিনা, চেয়ারম্যান, অপূর্বর বন্ধু স্বাধীন সদর হাসপাতাল মর্গে গিয়ে শনাক্ত করে লাশটা অপূর্বর লাশ না। স্বাধীনও মর্গ থেকে বের হয়ে পুলিশ, চেয়ারম্যান, ঘটু মোল্লা ও আব্দুর রহিমের সামনে বলে এটা অপূর্বর লাশ না আমি শতভাগ নিশ্চিত।’
অপূর্বর মা তানজিনা আক্তার বলেন, ‘ওরা আমার ছেলে বাড়ি থেকে খেলার জন্য ডেকে নিয়ে হত্যা করে গুম করেছে। মানুষের কাছে তারা মিথ্যা কথা বলে বেরাচ্ছে, আমার ছেলে নদীতে গোসল করতে নেমে পানিতে ডুবে গেছে। আমি আমার ছেলেকে সাঁতার শিখিয়েছি, সে সাঁতার জানে। ওর ডুবে যাওয়ার কথা না। আর ও যদি গোসলেই নামতো তাহলে ওর শুকনো জামা, প্যান্ট কেন ব্রীজের নিচে জঙ্গলের কাছে পাওয়া যাবে। ওরা সবাই একত্রিত হয়ে আমার ছেলেকে হত্যা করে লাশ নদীতে নিক্ষেপ কিংবা অন্য কোথাও গুম করেছে আমার ধারণা। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’
সাটুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস জানান, ‘তিল্লী এলাকা থেকে খবর আসে একটি শিশু গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয়েছে। এমন সংবাদ পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল অনেক খোঁজাখুঁজি করেও নিখোঁজ শিশুর সন্ধান পায়নি। থানায় এ ঘটনায় কোন মামলা হয়নি।’