Monday , 6 May 2024
শিরোনাম

তিন বছর পর লাভের আশায় রাজশাহীর গবাদিপশু খামারিরা

আবুল কালাম আজাদ ( রাজশাহী) :
গেল তিন বছর ধরে দেশের অর্থনীতিতে করোনা মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে এনেছিল। তবে এবার করোনার প্রাদুর্ভাব না থাকায় অর্থনীতির চাকাও অনেকটা সচল। এরই ধারাবাহিকতায় গত তিন বছরের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে রাজশাহীর খামারগুলোতে প্রায় ৪ লাখ পশু লালন-পালন করে ভালো দাম পাওয়ার আশায় বুক বেধে আছেন গবাদিপশু খামারিরা। তবে নিত্যপণ্যের দামের পাশাপাশি পশুখাদ্যের দাম দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ায় খামারিরা পশু লালনে লোকসানের চিন্তায়েও ভুগছেন।

রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, গেল বছর রাজশাহীতে কোরবানির জন্য ৩ লাখ ৮২ হাজার পশু পালন করেছিল। আর কোরবানি হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৯ হাজার পশু। হিসাব অনুযায়ী গত ঈদুল আযহায় প্রায় ৭৩ হাজার কোরবানির পশু অবিক্রিত থেকে গেছে। গেল বছর ঈদে রাজশাহীতে কোরবানির জন্য গরু পালন হয়েছিল ১ লাখ ৬ হাজার ৬৬৬টি। তার মধ্যে বিক্রি হয়েছে ৬২ হাজার ৮৫৪টি। অবিক্রি থেকে গেছে ৪৩ হাজার ৮১২টি গরু। আর ২ হাজার ৯৫৬টি মহিষের মধ্যে মাত্র ৩১৫টি মহিষ বিক্রি হয়েছে। তবে গত ঈদে ছাগল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় অর্জিত হয়। ওই বছর রাজশাহীতে ছাগল প্রস্তুত ছিল প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার। এর মধ্যে কোরবানি হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার। ভেড়া পালা হয়েছিল প্রায় ৩৫ হাজার। কোরবানি হয়েছে প্রায় ২০ হাজার ৬৬৩ টি।

আর গত বছরের অবিক্রিত পশুসহ সব মিলিয়ে এবার রাজশাহীতে চাহিদার চেয়ে ১০ হাজার পশু বেশি রয়েছে। জুনের শেষভাগে এসেই রাজশাহীর পশুহাটগুলো বেচাকেনায় জমে উঠবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবার করোনা না থাকার কারণে হাট জমবে। ভালো দামও পাবেন খামারিরা। প্রাণিসম্পদ বিভাগ এমনই আশা করছে। তবে সাধারণ খামারিরা পশুর ভালো দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারা বলছেন, চড়া দামে খাবার কিনে পশুকে খাওয়ানো হয়েছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের হাতে এখন টাকা নেই। তাই ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তাদের।

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি ছাগল রয়েছে রাজশাহীতে। এই বিভাগে ২৮ লাখ ২২ হাজার ৬৩৯টি কোরবানিযোগ্য ছাগল আছে। ছাগলের সঙ্গে ভেড়ার সংখ্যাও বেশি রাজশাহী বিভাগে। বিভাগের আট জেলায় আছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৭টি ভেড়া। এ ছাড়া ১১ লাখ ৩৯ হাজার ৬১৯টি গরু ও ২১ হাজার ৫২১টি মহিষ আছে রাজশাহীতে। রাজশাহী বিভাগের ১ লাখ ৩০ হাজার ২৬৫ জন খামারি এসব পশু লালন-পালন করেছেন। এসব পশু দিয়েই রাজশাহী বিভাগের চাহিদা মেটানো সম্ভব।

অন্যদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১৬ হাজার ৭৯ জন খামারির কাছে আছে ১ লাখ ২১ হাজার ৩৭২টি গরু, ২ লাখ ৩৩ হাজার ২৩৫টি ছাগল, ৩৮ হাজার ২৪৫টি ভেড়া ও ৩ হাজার ২১১টি মহিষ আছে। মোট কোরবানির জন্য পশু আছে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৫২টি। জেলায় এবার সম্ভাব্য চাহিদা ৩ লাখ ৮২ হাজার ১১৮টি। চাহিদার চেয়ে প্রায় ১০ হাজার পশু বেশি আছে রাজশাহী জেলায়।

রাজশাহী নগরীর সপুরা আবাসিক এলাকার ‘সপুরা এগ্রো ফার্ম’ নামের সত্ত্বাধিকারী সুমন বলেন, ‘আমার খামারে প্রায় ২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। খামারে রয়েছে প্রায় ১১০ পশু। এর মধ্যে গরু ৮৫টি ও মহিষ রয়েছে ২৫টি। এই খামারে কাজ করেন ছয়জন কর্মচারী। গত বছর প্রতিমাসে তাদের বেতনসহ পশু পালনে খরচবাবদ ব্যয় হয়েছিল ৫-৬ লাখ টাকা। কিন্তু এবার পশুখাদ্যের দাম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে যাওয়ায় মাসে প্রায় ১০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। এর আগের দুই বছর লোকসান হয়েছে করোনার কারণে। আর এবার লোকসানের আশঙ্কা করছি, পশুখাদ্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারণে।’

রাজশাহীর খামারি সওদাগর এগ্রোর সত্ত্বাধিকারী আরাফাত রুবেল বলেন, ‘আগে মাসে ৩ হাজার টাকা খরচ করলেই একটা গরু পোষা যেত। এখন গো-খাদ্যের এত দাম যে মাসে খরচ ৭ হাজার টাকা পড়ে যাচ্ছে। তাই কোরবানির বাজারে খামারিরা বেশি দাম চাইবেন, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের হাতেও টাকা কম। তাই পশুর দাম কেমন উঠবে তা নিয়ে একটা শঙ্কা আছে’

গোদাগাড়ীর মাটিকাটা এলাকার খামারি সেতাবুর রহমান বলেন, ‘খামারে গরু থাকলেও দাম নিয়ে শঙ্কায় আছি। কারণ ভারত থেকে গরু এলে খামারিরা দাম পান না।’

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. জুলফিকার আখতার হোসেন বলেন, ‘এবার করোনা নেই। আবার গবাদি পশু লালন-পালনে খরচ বেড়েছে। তাই এবার কোরবানির পশু ক্রয়ে হাটে দাম বেশি থাকবে এটাই স্বাভাবিক।’ তিনি বলেন, রাজশাহীতে কত গবাদিপশু আছে তার একটা প্রাথমিক তালিকা করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী জেলায় পশুর কোনো সংকট নেই। রাজশাহীর পশু দিয়ে এ জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলাতেও পাঠানো যাবে।

Check Also

টিভিএন২৪ টিভির সিনিয়র সাংবাদিক ও বিশেষ প্রতিনিধি শামীম আহমদ আমেরিকা থেকে কাতার আগমন উপলক্ষে মত বিনিময়ের আয়োজন করেছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ কাতার কেন্দ্রীয় কমিটি৷

টিভিএন ২৪ টিভি কাতার প্রতিনিধি ই এম আকাশের পরিচালনায় অনুষ্ঠানের সভাপতি করেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ কাতার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x