ঢাকা , শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :

ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ফিলিস্তিনিদের হত্যা, তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘের

সাংবাদিক

 

গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ফিলিস্তিনিদের হত্যার ঘটনায় স্বাধীনভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

রোববার (১ জুন) যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত রাফা কেন্দ্র থেকে খাবারের জন্য অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানো হয়। রেড ক্রস জানিয়েছে, এ ঘটনায় ১৭৯ জন হতাহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২১ জন মারা গেছেন। হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থার তথ্যমতে নিহতের সংখ্যা ৩১।

এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলের কাছাকাছি বা ভেতরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, এই ধরণের প্রতিবেদন মিথ্যা। জিএইচএফ জানিয়েছে যে, প্রতিবেদনগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং তাদের স্থাপনায় বা তার কাছাকাছি কোনো হামলার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

সোমবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস বলেন, রোববার গাজায় সাহায্য চাইতে গিয়ে ফিলিস্তিনিদের নিহত ও আহত হওয়ার খবরে আমি মর্মাহত। আমি এই ঘটনার তাৎক্ষণিক ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি এবং দোষীদের জবাবদিহি করার আহ্বান জানাচ্ছি।

মহাসচিবের করা মন্তব্যকে অপমানজনক হিসেবে আখ্যায়িত করে সামাজিকমাধ্যমে এক্সে করা এক পোস্টে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এতে হামাসের কথা উল্লেখ না করার জন্য তার সমালোচনাও করেছে দেশটি।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস বলছে, রাফায় রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতালে সেই সময়ে ১৭৯ জন ব্যাপক হতাহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। হতাহতদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন এবং ২১ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। সব রোগী জানিয়েছেন যে তারা সাহায্য বিতরণ স্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন।

মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) জানিয়েছে, খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে তাদের দলগুলোও গুরুতর আহত ব্যক্তিদেরও চিকিৎসা করেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

তারা আরও জানিয়েছেন, রোগীদের ইসরাইলি ড্রোন, হেলিকপ্টার, ট্যাংক এবং সেনারা চারদিক থেকে গুলি চালিয়েছে। এসময় তাদের এক কর্মীর ভাই বিতরণ কেন্দ্র থেকে সাহায্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করার সময় নিহত হয়েছেন।

রাফার এক সাংবাদিক বিবিসিকে জানিয়েছেন, জিএইচএফের সাইটের কাছে রাফার আল-আলম গোলচত্বরের কাছে ফিলিস্তিনিরা জড়ো হয়েছিল, তখন ইসরাইলি ট্যাংকগুলো এগিয়ে এসে গুলি চালায়। রোববার সকালে অনলাইনে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে যে ফিলিস্তিনিরা বালুর মধ্যে একটি খোলা জায়গায় লুকিয়ে আছে এবং স্বয়ংক্রিয় গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে, বিবিসি অবস্থানটি যাচাই করতে পারেনি কারণ সেখানে পর্যাপ্ত চিহ্ন দৃশ্যমান ছিল না।

ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) রোববার বিকালে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে যে প্রাথমিক তদন্তে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে তাদের সেনারা গুলি চালায়নি। মানবিক সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছাকাছি বা ভেতরে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে এবং এই ধরণের প্রতিবেদন মিথ্যা। মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডিফ্রিন হামাসের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর এবং গাজার জনগণকে সেই বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার জন্য স্পষ্ট ও সহিংস চেষ্টা করার অভিযোগ করেছেন।

সূত্র: বিবিসি

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপলোডকারীর তথ্য
আপডেটের সময় : ০৬:২০:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫
৫৬২ Time View

ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ফিলিস্তিনিদের হত্যা, তদন্তের আহ্বান জাতিসংঘের

আপডেটের সময় : ০৬:২০:১২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ জুন ২০২৫

 

গাজায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে ফিলিস্তিনিদের হত্যার ঘটনায় স্বাধীনভাবে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

রোববার (১ জুন) যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) পরিচালিত রাফা কেন্দ্র থেকে খাবারের জন্য অপেক্ষমাণ ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালানো হয়। রেড ক্রস জানিয়েছে, এ ঘটনায় ১৭৯ জন হতাহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২১ জন মারা গেছেন। হামাস পরিচালিত সিভিল ডিফেন্স সংস্থার তথ্যমতে নিহতের সংখ্যা ৩১।

এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলের কাছাকাছি বা ভেতরে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা অস্বীকার করেছে। তারা বলেছে, এই ধরণের প্রতিবেদন মিথ্যা। জিএইচএফ জানিয়েছে যে, প্রতিবেদনগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং তাদের স্থাপনায় বা তার কাছাকাছি কোনো হামলার প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।

সোমবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব গুতেরেস বলেন, রোববার গাজায় সাহায্য চাইতে গিয়ে ফিলিস্তিনিদের নিহত ও আহত হওয়ার খবরে আমি মর্মাহত। আমি এই ঘটনার তাৎক্ষণিক ও স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি এবং দোষীদের জবাবদিহি করার আহ্বান জানাচ্ছি।

মহাসচিবের করা মন্তব্যকে অপমানজনক হিসেবে আখ্যায়িত করে সামাজিকমাধ্যমে এক্সে করা এক পোস্টে ইসরাইলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এতে হামাসের কথা উল্লেখ না করার জন্য তার সমালোচনাও করেছে দেশটি।

ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস বলছে, রাফায় রেড ক্রস ফিল্ড হাসপাতালে সেই সময়ে ১৭৯ জন ব্যাপক হতাহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। হতাহতদের বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন এবং ২১ জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। সব রোগী জানিয়েছেন যে তারা সাহায্য বিতরণ স্থানে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিলেন।

মেডিসিনস স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) জানিয়েছে, খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে তাদের দলগুলোও গুরুতর আহত ব্যক্তিদেরও চিকিৎসা করেছে, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

তারা আরও জানিয়েছেন, রোগীদের ইসরাইলি ড্রোন, হেলিকপ্টার, ট্যাংক এবং সেনারা চারদিক থেকে গুলি চালিয়েছে। এসময় তাদের এক কর্মীর ভাই বিতরণ কেন্দ্র থেকে সাহায্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করার সময় নিহত হয়েছেন।

রাফার এক সাংবাদিক বিবিসিকে জানিয়েছেন, জিএইচএফের সাইটের কাছে রাফার আল-আলম গোলচত্বরের কাছে ফিলিস্তিনিরা জড়ো হয়েছিল, তখন ইসরাইলি ট্যাংকগুলো এগিয়ে এসে গুলি চালায়। রোববার সকালে অনলাইনে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে দেখা গেছে যে ফিলিস্তিনিরা বালুর মধ্যে একটি খোলা জায়গায় লুকিয়ে আছে এবং স্বয়ংক্রিয় গুলির শব্দ শোনা যাচ্ছে। তবে, বিবিসি অবস্থানটি যাচাই করতে পারেনি কারণ সেখানে পর্যাপ্ত চিহ্ন দৃশ্যমান ছিল না।

ইসরাইল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) রোববার বিকালে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে বলেছে যে প্রাথমিক তদন্তে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে তাদের সেনারা গুলি চালায়নি। মানবিক সাহায্য বিতরণ কেন্দ্রের কাছাকাছি বা ভেতরে থাকা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে এবং এই ধরণের প্রতিবেদন মিথ্যা। মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফি ডিফ্রিন হামাসের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানোর এবং গাজার জনগণকে সেই বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার জন্য স্পষ্ট ও সহিংস চেষ্টা করার অভিযোগ করেছেন।

সূত্র: বিবিসি