Thursday , 9 May 2024
শিরোনাম

যুক্তরাষ্ট্রে গর্ভপাত ইস্যু: আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে ক্ষোভ

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের আদেশে মার্কিন নারীদের গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার উল্টে যাওয়ার ঘটনা বিশ্বজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই একে নারীর অধিকারের ওপর বড় ধরনের আঘাত হিসেবে দেখছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অনেক দেশের কাছে ‘মডেল’ হওয়ায় এখন অন্যান্য দেশেও এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে বলে কেউ কেউ আশঙ্কাও করছেন।

প্রায় ৫০ বছর আগে রো বনাম ওয়েড মামলার রায়ের কারণে এতদিন মার্কিন নারীরা গর্ভধারণের ৬ মাস পর্যন্ত তুলনামূলক সহজেই গর্ভপাত করতে পারতেন।

শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট ওই রায় পাল্টে দেয়ায় শিগগিরই দেশটির অনেক রাজ্যে গর্ভপাত নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যমগুলো।

তবে বেশকিছু রাজ্য বলছে, সর্বোচ্চ আদালত কেড়ে নিলেও তারা নারীর গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষেই থাকবে। এ সুবিধা থাকলে অন্য রাজ্যের তুলনামূলক ধনী নারীরা চাইলেই যেসব রাজ্যে গর্ভপাত বৈধ সেখানে যেতে পারলেও দরিদ্ররা বিপাকে পড়বেন বলেই মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সুপ্রিম কোর্টের আদেশে ‘স্তম্ভিত’হওয়ার কথা জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট রো বনাম ওয়েড মামলায় আপিলের রায় দিয়েছিল ১৯৭৩ সালে। তার ৫ বছর পর ইতালিতেও ‘ল ১৯৪’ পাস হলে গর্ভপাত বৈধ হয়।

গর্ভপাত ইস্যুটি যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইতালিতে এতটা গুরুত্বু না পেলেও সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাথলিক গির্জাসংশ্লিষ্ট কট্টর-ডানপন্থি কিছু গোষ্ঠী বিষয়টি সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। সে কারণে মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে ইতালিকেও নড়েচড়ে বসতে হচ্ছে।

দেশটির বাম ও মধ্যপন্থি ঘরানার রাজনীতিকরা সমস্বরে মার্কিন আদালতের আদেশের নিন্দা জানাচ্ছেন।

বামপন্থি, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমা বনিনো বলছেন, ইতালিও যে পেছন পানে হাঁটা শুরু করতে পারে এবং ‘স্থায়ী মনে হওয়া অনেক অর্জনই যে হাতছাড়া হতে পারে’ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতের সিদ্ধান্ত তাই দেখাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের আদেশ আয়ারল্যান্ডকে তীব্র ঝাঁকুনি দিয়েছে। দেশটিতে গর্ভপাত বৈধতা পেয়েছে মাত্র কয়েক বছর হল, এর মধ্যে মার্কিন আদালতের এমন রায়!

এর প্রতিক্রিয়ায় অনেকে ২০১৮ সালে গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে আইরিশ জনগণের দেয়া গণরায়ের স্মৃতি শেয়ার করছেন, অনেকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন ভারতীয় নারী সবিতা হলপ্পনবারের করুণ মৃত্যুর কথাও।

দন্তচিকিৎসক সবিতা স্বামীর সঙ্গে আয়ারল্যান্ডে থাকতেন। অন্তঃসত্ত্বা সবিতা ২০১২ সালে মিসক্যারিজের পর ইনফেকনে ভুগে মারা যান।

মিসক্যারিজের সময় তার প্রাণ বাঁচাতে পরিবারের পক্ষ থেকে গর্ভপাতের আবেদন করা হলেও আইনি বাধা থাকায় আইরিশ চিকিৎসকরা তাতে রাজি হননি। কয়েক দিনের দুর্বিসহ যন্ত্রণা ভোগ করে শেষ পর্যন্ত রক্তে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় মারা যান ৩১ বছর বয়সী সবিতা।

তার ওই মৃত্যুর পর আয়ারল্যান্ডে গর্ভপাতের অধিকারের পক্ষে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় হয় গণভোট, যা দ্বীপদেশটিতে গর্ভপাতকে বৈধতা দেয়।

ওই আন্দোলনে অংশ নেয়া অনেকে এখন আগামী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, দেশটিকে এখন হয়তো সবিতার মতো অসংখ্য ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে।

‘বিশ্ব দেখছে, যুক্তরাষ্ট্র ক্রমাগত অচেনা হয়ে উঠছে,’ টুইটারে এমনটাই লিখেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ড. জেনিফার ক্যাসিডি, যিনি ২০১৮ সালের গণভোটের ফল ঘোষণার পর ডাবলিনে তা উদ্‌যাপন করা উচ্ছ্বসিত হাজারও মানুষের একজন ছিলেন।

কেবল আয়ারল্যান্ডেই নয়, প্রতিবেশী নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের অনেকেও যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে হতাশ।

‘লজ্জাজনক সিদ্ধান্ত’,বলেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের গ্রেইনি টাগার্ট, যিনি নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে গর্ভপাতের অধিকারের সমর্থনে লড়াই করেছেন।

Check Also

নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঈশ্বরগঞ্জের ইউএনও আরিফুল ইসলাম প্রিন্স সড়ক দূর্ঘটনায় গুরুতর আহত

নিজস্ব প্রতিবেদক । ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) আরিফুল ইসলাম প্রিন্স নির্বাচনী দায়িত্ব পালন …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x