ঢাকা , সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পূর্ণ প্রয়োগে দেশে শৃঙ্খলা ফিরবে: সাইফুল্লাহ খান সাইফ

সাংবাদিক

বাংলাদেশ আজ এক অনিশ্চয়তা ও অব্যবস্থাপনার কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে চাঁদাবাজি, মাদক, জমি দখল, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঝে নানা ধরনের প্রভাব ও দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ঠিক এমন এক পরিস্থিতিতে বারবার উচ্চারিত হচ্ছে একটি প্রস্তাব—বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসির পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা প্রদান।

এই দাবি হঠাৎ আবেগপ্রবণ কোনো কণ্ঠস্বর নয়; এটি বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নেওয়া। আমরা দেখেছি, কোনো দুর্যোগ বা সংকটকালীন সময়ে সেনাবাহিনী মাঠে নামলেই দেশে দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থা, ২০১৩-১৪ সালের রাজনৈতিক সহিংসতা কিংবা কোভিড মহামারিকালে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলাবদ্ধ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা আজও মানুষের মনে আস্থা জাগায়।

বর্তমানে সেনাবাহিনীকে মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সীমিত পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়। কিন্তু সেটি এককালীন বা পরিস্থিতিভিত্তিক। বাস্তবতা হলো, এই বাহিনীকে স্থায়ীভাবে বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পূর্ণাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিলে দেশজুড়ে আইনের শাসন আরও কার্যকর হবে।

কেন প্রয়োজন?

১. চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস রোধে কঠোরতা: স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি এখন ওপেন সিক্রেট। সেনাবাহিনী দায়িত্ব নিলে কেউই ছাড় পাবে না।

২. মাদকের বিস্তার রোধ: সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত মাদক এখন জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। সেনাবাহিনী কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এই চক্র ভাঙতে সক্ষম।

৩. দ্রুত বিচার ও ব্যবস্থা: যেকোনো অপরাধ ঘটার পর তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধ প্রবণতা কমে আসে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকলে সেনাবাহিনী এই ব্যবস্থা নিতে পারবে।

৪. জনগণের আস্থা: দেশের প্রতিটি সেক্টরে যখন মানুষ আস্থাহীনতায় ভুগছে, তখন সেনাবাহিনীই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যাদের প্রতি জনগণের অগাধ আস্থা রয়েছে। এই আস্থাই তাদের কার্যক্ষমতা বাড়াবে।

নিয়ন্ত্রণ ও দায়বদ্ধতা দরকার

অবশ্যই, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনায় নিতে হবে। সেনাবাহিনীর এ ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ যেন কোনোমতেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের পথে না যায়, তার জন্য একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। সরকার, বিচার বিভাগ এবং সুশীল সমাজকে নিয়ে একটি ত্রিপাক্ষিক নজরদারি ব্যবস্থা তৈরি করে এই ক্ষমতার প্রয়োগ সীমিত ও সুনির্দিষ্ট করতে হবে।

আইন-শৃঙ্খলা শুধু পুলিশের উপর ছেড়ে দিলে হবে না, বিশেষ করে যখন পুলিশ বাহিনীর একাংশও নানা ধরনের চাপ ও দুর্নীতির শিকার। সেনাবাহিনীর নিয়মানুবর্তিতা, নিরপেক্ষতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আজ দেশের জন্য একটি বড় প্রয়োজন। তাই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হলেও সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসির পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা দিয়ে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সাহসী সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে।

 

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ১২:২৪:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
৫১৭ Time View

সেনাবাহিনীর ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা পূর্ণ প্রয়োগে দেশে শৃঙ্খলা ফিরবে: সাইফুল্লাহ খান সাইফ

আপডেটের সময় : ১২:২৪:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশ আজ এক অনিশ্চয়তা ও অব্যবস্থাপনার কঠিন সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে চাঁদাবাজি, মাদক, জমি দখল, দুর্নীতি ও প্রশাসনিক দুর্বলতা। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঝে নানা ধরনের প্রভাব ও দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। ঠিক এমন এক পরিস্থিতিতে বারবার উচ্চারিত হচ্ছে একটি প্রস্তাব—বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসির পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা প্রদান।

এই দাবি হঠাৎ আবেগপ্রবণ কোনো কণ্ঠস্বর নয়; এটি বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে জন্ম নেওয়া। আমরা দেখেছি, কোনো দুর্যোগ বা সংকটকালীন সময়ে সেনাবাহিনী মাঠে নামলেই দেশে দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থা, ২০১৩-১৪ সালের রাজনৈতিক সহিংসতা কিংবা কোভিড মহামারিকালে সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলাবদ্ধ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা আজও মানুষের মনে আস্থা জাগায়।

বর্তমানে সেনাবাহিনীকে মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সীমিত পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়া হয়। কিন্তু সেটি এককালীন বা পরিস্থিতিভিত্তিক। বাস্তবতা হলো, এই বাহিনীকে স্থায়ীভাবে বা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পূর্ণাঙ্গ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিলে দেশজুড়ে আইনের শাসন আরও কার্যকর হবে।

কেন প্রয়োজন?

১. চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস রোধে কঠোরতা: স্থানীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি এখন ওপেন সিক্রেট। সেনাবাহিনী দায়িত্ব নিলে কেউই ছাড় পাবে না।

২. মাদকের বিস্তার রোধ: সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত মাদক এখন জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে। সেনাবাহিনী কঠোর নজরদারির মাধ্যমে এই চক্র ভাঙতে সক্ষম।

৩. দ্রুত বিচার ও ব্যবস্থা: যেকোনো অপরাধ ঘটার পর তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে অপরাধ প্রবণতা কমে আসে। ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা থাকলে সেনাবাহিনী এই ব্যবস্থা নিতে পারবে।

৪. জনগণের আস্থা: দেশের প্রতিটি সেক্টরে যখন মানুষ আস্থাহীনতায় ভুগছে, তখন সেনাবাহিনীই একমাত্র প্রতিষ্ঠান যাদের প্রতি জনগণের অগাধ আস্থা রয়েছে। এই আস্থাই তাদের কার্যক্ষমতা বাড়াবে।

নিয়ন্ত্রণ ও দায়বদ্ধতা দরকার

অবশ্যই, এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনায় নিতে হবে। সেনাবাহিনীর এ ধরনের ক্ষমতা প্রয়োগ যেন কোনোমতেই মানবাধিকার লঙ্ঘনের পথে না যায়, তার জন্য একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। সরকার, বিচার বিভাগ এবং সুশীল সমাজকে নিয়ে একটি ত্রিপাক্ষিক নজরদারি ব্যবস্থা তৈরি করে এই ক্ষমতার প্রয়োগ সীমিত ও সুনির্দিষ্ট করতে হবে।

আইন-শৃঙ্খলা শুধু পুলিশের উপর ছেড়ে দিলে হবে না, বিশেষ করে যখন পুলিশ বাহিনীর একাংশও নানা ধরনের চাপ ও দুর্নীতির শিকার। সেনাবাহিনীর নিয়মানুবর্তিতা, নিরপেক্ষতা ও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা আজ দেশের জন্য একটি বড় প্রয়োজন। তাই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য হলেও সেনাবাহিনীকে ম্যাজিস্ট্রেসির পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা দিয়ে দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার সাহসী সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে।