Tuesday , 19 March 2024
শিরোনাম

ইতিহাসে প্রথমবার: ওষুধে ভালো হলো ক্যান্সার

ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কারের গবেষণায় নজিরবিহীন এক সাফল্য মিলেছে। কেমোথেরাপি ছাড়াই কয়েকজন রোগী একটি ওষুধ সেবন করে মাত্র ছয় মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তারা মলদ্বারের ক্যানসারে (রেকটাল ক্যানসার) আক্রান্ত ছিলেন।

১৮ জন ক্যান্সার রোগীকে নিয়ে খুব ছোট পরিসরে ওই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানো হয়। প্রায় ছয় মাস তাদেরকে ডোস্টারলিম্যাব নামের একটি ওষুধ সেবন করানো হয়। পরীক্ষা শেষে দেখা গেছে তাদের টিউমারগুলো সম্পূর্ণ ভালো হয়ে গেছে।

ডোস্টারলিম্যাব হলো ল্যাবরেটরিতে বানানো অণুসংবলিত একটি ওষুধ। এটি মানবদেহে বিকল্প অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করে। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ১৮ জন মলদ্বারের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সবাইকে একই ওষুধ দেওয়া হয়েছিল। সব রোগীই ক্যান্সার থেকে সম্পূর্ণরূপে সেরে উঠেছেন। শারীরিক পরীক্ষা—এন্ডোস্কোপি, পজিট্রন ইমিশন টমোগ্রাফি বা পিইটি স্ক্যান এবং এমআরআই স্ক্যানের মাধ্যমে তাদের শরীরে কোনো ক্যান্সার কোষ শনাক্ত করা যায়নি।

নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোন ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারের ডা. লুইস এ. ডিয়াজ জে এ ব্যাপারে নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ক্যান্সারের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এমন ঘটনা ঘটল।

ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশ নেওয়া রোগীরা এর আগে কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন এবং জটিল অস্ত্রোপচার করেছিলেন। এ ধরনের চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে অন্ত্র, প্রস্রাবের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং এমনকি যৌন সক্ষমতা হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও থাকে। ১৮ জন রোগী এই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন মূলত সুস্থ হওয়ার একটা ক্ষীণ আশা নিয়ে। আশ্চর্যজনকভাবে তাদের আর অন্য কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন পড়েনি।

এই ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল নিয়ে চিকিৎসাজগতে বেশ আলোড়ন তৈরি হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময় ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোলোরেক্টাল ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যালান পি. ভেনুক বলেন, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব রোগীর এভাবে সেরে ওঠার ঘটনা অভূতপূর্ব। তিনি এই গবেষণাকে ‘বিশ্বে প্রথম’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এটি বিশেষভাবে আকর্ষণীয় কারণ সব রোগী ট্রায়াল ড্রাগ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো জটিলতার শিকার হননি।

মেমোরিয়াল স্লোন ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টার এবং গবেষণাপত্রের একজন সহ-লেখক ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. আন্দ্রেয়া সেরসেক বলেন, ‘রোগীরা যে মুহূর্তে আবিষ্কার করেন যে তারা সম্পূর্ণ ক্যানসারমুক্ত হয়ে গেছেন, তারা খুশিতে ও কান্নায় ভেঙে পড়েন’।

এই পরীক্ষায় রোগীরা ছয় মাস ধরে প্রতি তিন সপ্তাহ অন্তর ডস্টারলিম্যাব গ্রহণ করেন। তারা সবাই ক্যান্সারের একই পর্যায়ে ছিলেন। টিউমার মলদ্বারেই সীমাবদ্ধ ছিল, শরীরের অন্যান্য অঙ্গে তখনো ছড়িয়ে পড়েনি।

ক্যান্সার গবেষকরা এখন নতুন ওষুধটির কার্যকারিতা পর্যালোচনা করছেন। তারা বলছেন, চিকিৎসাটি আশাব্যঞ্জক। তবে অন্য ধরনের ক্যান্সার রোগীর জন্য এটি কাজ করবে কি না এবং ক্যান্সার সত্যি সত্যিই নির্মূল হয় কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে আরও বড় পরিসরে গবেষণা চালাতে হবে।

Check Also

শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিন ম্যাচ একদিনের আন্তর্জাতিক সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়লাভ করায় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x