Sunday , 5 May 2024
শিরোনাম

ছয় বছরে নিষ্পত্তি হয়নি একটি আপিলও, সাড়ে তিন বছরে শুনানি নেই

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের বিচারাধীন আপিলের সংখ্যা বাড়ছেই। গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারের রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে এখন পর্যন্ত ৪২টি আপিল বিচারাধীন। যাদের বেশিরভাগ আসামির মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে ট্রাইব্যুনালে।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ট্রাইব্যুনালে রায় হলেও গত ছয় বছরে একটি আপিল মামলাও নিষ্পত্তি হয়নি। আর গত সাড়ে তিন বছরের বেশি সময়ে কোনো আপিলের শুনানি হচ্ছে না। বিচারাধীন থাকা এ মামলাগুলো কবে নাগাদ নিষ্পত্তি হবে এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা কোনো ধারণা দিতে পারেননি।

তবে, রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেছেন, ক্রম অনুযায়ী কার্যতালিকায় আসলে আপিলগুলো দ্রুত নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে।

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের মার্চে যাত্রা শুরু করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউশন শাখার তথ্য মতে, ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ৫১ রায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন মোট ১৩১ জন আসামি। এর মধ্যে মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে ৯১ জনের বিরুদ্ধে। আমৃত্যু কারাদণ্ড পেয়েছেন ২৫ জন আসামি। এছাড়া যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছেন ৯ জন আসামি।

আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ অনুযায়ী আসামির সাজা কিংবা খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের বিধান রয়েছে। তবে, সাজাপ্রাপ্ত কিন্তু পলাতক আসামিদের আপিলের সুযোগ নেই। এছাড়া ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধনের পর অপর্যাপ্ত সাজার বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ রয়েছে আপিল বিভাগে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১০ বছরের বেশি সময় আগে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আপিলের পর শুনানি শেষে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর তার দণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এরপর রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করলে ২০১৭ সালের ১৫ মে সাঈদীর আমৃত্যু কারাদণ্ড বহাল থাকে। এই মামলা নিষ্পত্তির পর আর কোনো আপিল চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি।

সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের তথ্য মতে, আপিল বিভাগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সবশেষ আপিল শুনানি হয় ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর। ট্রাইব্যুনালে সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিল শুনানি শেষে পরের বছর ১৪ জানুয়ারি তার মৃত্যুদণ্ড বহালের রায় দেয় আপিল বিভাগ। পরে এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে রিভিউ (রায় পুনর্বিবেচনা) আবেদন করেন কায়সার। তবে, এটি শুনানির আগেই গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি কারাগারে থাকা কায়সার চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। অন্যদিকে জামায়াত নেতা এটিএম আজহারকে ট্রাইব্যুনালের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল একই বছরের ৩১ অক্টোবর বহাল রেখে রায় দেয় আপিল বিভাগ। এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন করেন আজহার। এটি শুনানির অপেক্ষায় আছে। সে হিসেবে সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় ধরে ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলার শুনানি হচ্ছেনা। তবে, ২০২০ সালের মার্চ থেকে দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের দরুণ প্রায় দুই বছর বিচারকাজ বিঘ্নিত হয়। কখনো ভার্চুয়াল কখনো নিয়মিত আদালতের কার্যক্রম চলে। বিরুপ পরিস্থিতিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারকাজেও এর প্রভাব পড়ে। ফলে মামলা নিষ্পত্তির বিষয়টি বিলম্বিত হয়।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় ও রায় বিভিউ নিষ্পত্তি শেষে বিভিন্ন সময়ে এখন পর্যন্ত ৬ মামলায় ৬ জনের ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। তারা হলেন- আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মতিউর রহমান নিজামী এবং মীর কাশেম আলী। এছাড়া ট্রাইব্যুনালের রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম (আমৃত্যু কারাদণ্ড)সহ সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলীম (আমৃত্যু কারাদণ্ড), জামায়াতের সাবেক নেতা আব্দুস সোবহান (মৃত্যুদণ্ড) মৃত্যুবরণ করায় তাদের আপিল অকার্যকর ঘোষণা করে আপিল বিভাগ। এছাড়া ট্রাইব্যুনালে সর্বোচ্চ দণ্ডপ্রাপ্ত মাহবুবুর রহমান, আকমল আলী তালুকদার, মোসলেম প্রধান, সাখাওয়াত হোসেন ও আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত বিল্লাল হোসেন মৃত্যুবরণ করায় তাদের আপিল অকার্যকর ঘোষণা করে সর্বোচ্চ আদালত।

ট্রাইব্যুনালের বিভিন্ন সময়ে দেওয়া রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মোবারক হোসেন, আব্দুল জব্বার, মাহিদুর রহমান, সিরাজুল হক, খান মো. আকরাম হোসেন, ফোরকান মল্লিক, আতাউর রহমান ননী, মজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া, মহিবুর রহমান বড় মিয়া, আমির আহমেদ, ইসহাক সিকদার, আব্দুল কুদ্দুস, খলিলুর রহমান, আব্দুল মান্নান, সামসুদ্দিন আহমেদ, এস এম ইউসুফ আলী, ইউনুছ আহমেদ, রিয়াজ উদ্দিন ফকির, আব্দুল কুদ্দুস, রনজু মিয়া, আমজাদ হোসেন হাওলাদার, খন্দকার গোলাম রব্বানী, খন্দকার গোলাম সাব্বিরসহ ৪২ জনের আপিল বিচারাধীন রয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী দেশ রূপান্তরকে বলেন, কেন আপিল নিষ্পত্তি হচ্ছেনা সে প্রশ্ন আমাদেরও। ট্রাইব্যুনালে বছরে কমপক্ষে তিনটি মামলার রায় হচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর আপিল শুনানি ও নিষ্পত্তি একটি আইন প্রক্রিয়া। কিন্তু এটি দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে। এ প্রক্রিয়ায় এত লম্বা বিরতি চোখে পড়ার মতো। আমরা মনে করি, আপিলগুলো নিষ্পত্তি হওয়া উচিৎ। প্রয়োজনে প্রসিকিউটরদের যারা আপিল বিভাগে শুনানির অনুমোদন আছে তারা সহযোগীতা করবে।

জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন দেশ রূপান্তরকে বলেন, দুটি মামলা (কায়সার ও আজহার) নিষ্পত্তির লক্ষে তালিকায় ছিল। কিন্তু তাদের আইনজীবীরা সময় নিয়েছিলেন। এখন মামলাগুলো নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে। কার্যতালিকায় তালিকায় আসলে আস্তে আস্তে সবগুলো মামলা নিষ্পত্তি হবে।

Check Also

হাইকোর্টের নির্দেশে অসন্তোষ, আপিল করবেন শিক্ষামন্ত্রী

দাবদাহের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের এমন আদেশের বিরুদ্ধে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x