ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি বিতর্কিত খসড়া সংশোধন না করলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা
ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি বিতর্কিত খসড়া সংশোধন না করলে কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা কলেজ ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা সংরক্ষণ রক্ষা কমিটি। রবিবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সংগঠনটি।
নেতৃবৃন্দ বলেন, সাত কলেজের স্বতন্ত্র রক্ষা করেই সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি হতে হবে।
সংগঠনের আহ্বায়ক ও ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু বলেন, হাইব্রিড পদ্ধতিতে নয় অক্সফোর্ড, ফেডারেল বা অন্য কোনো মডেল অনুসরণ করে ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে এই ইউনিভার্সিটির অধীনে সাতটি কলেজ পরিচালিত হবে।
প্রকাশিত খসড়ায় অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় হলে সাতটি কলেজ তার নিজস্ব স্বকীয়তা হারানোর পাশাপাশি ইডেন ও বদরুন্নেসা কলেজের নারী শিক্ষার সংকোচিত হবে। ফলে এই খসড়া সংশোধন না করা হলে ১৬ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধনসহ কঠোর সর্মসূচি দেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, ঢাকা কলেজসহ প্রসিদ্ধ সাতটি সরকারি কলেজের স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্য বজায় রেখে প্রতিযোগিতামূলকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালাতে হবে।
এসময়, উদ্ভূত সমস্যা নিরসন এবং ঢাকা কলেজসহ ঐতিহ্যবাহী সাত কলেজের স্বাতন্ত্র্য রক্ষায় ১০ দফা প্রস্তাবনা দেন কমিটির আহ্বয়ক।
প্রস্তাবনাসমূহঃ
১, যে-কোনো মূল্যে বাংলাদেশের উচ্চশিক্ষার প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ ঢাকা কলেজের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে।
২. এই কলেজের অবকাঠামোসহ এক ইঞ্চি জমিও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে লিখে দেওয়া যাবে না।
৩. বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা ব্যক্তিস্বার্থ সংরক্ষণে এবং বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ থেকে শিক্ষা-সংকোচনমূলক কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না।
৪. অক্সফোর্ড, ফেডারেল বা অন্য কোনো মডেল অনুসরণে একটি নিয়ন্ত্রণকারী বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়) প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে, যেখানে ঢাকা কলেজসহ প্রসিদ্ধ সাতটি সরকারি কলেজ স্বমহিমায় স্বাতন্ত্র্য ও ঐতিহ্য বজায় রেখে প্রতিযোগিতামূলকভাবে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারে।
৫. উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিতে হবে। তাদেরকে ‘নিজভূমে পরবাসী’ বানানোর ষড়যন্ত্র পরিহার করতে হবে।
৬. উচ্চশিক্ষা কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সিলেবাস সমাপ্তকরণ, যথাসময়ে পরীক্ষাগ্রহণ ও দ্রুততম সময়ে ফলাফল প্রকাশ নিশ্চিত করতে হবে; শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন সেশনজটমুক্ত করতে হবে।
৭. শিক্ষক-ছাত্র অনুপাত যৌক্তিক করার জন্য দ্রুত শিক্ষকসংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। শিক্ষার বৈষম্য নিরসনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ বিভাগপ্রতি ২০ থেকে ৩৫ জন শিক্ষক এবং প্রয়োজনীয় সহায়ক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ/পদায়ন করতে হবে। সময়ের দাবিতে নতুন নতুন চাহিদাসম্পন্ন বিভাগ খুলতে হবে।
৮. শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মেধাবৃত্তি প্রদান, আবাসন সুবিধা বৃদ্ধি, খাবারে ভর্তুকি প্রদান ও শিক্ষাঋণ প্রদান করতে হবে। তাদের খেলাধুলা ও সহশিক্ষা-কার্যক্রমের সুযোগ বাড়াতে হবে। রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজে শিক্ষার্থীপ্রতি বরাদ্দ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান করতে হবে।
৯. শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, প্রাক্তনশিক্ষার্থী, শিক্ষাবিদ, সুশীলসমাজসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মতামতের আলোকে (লোকদেখানো মতামত-গ্রহণ নয়), টেকসই ও বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
১০. প্রায় এক লক্ষ সত্তর হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন এবং শতবছরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে হাইব্রিড শিক্ষা বা কোনো অপ্রচলিত শিক্ষা কাঠামোর পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপকরণে পরিণত করা যাবে না। কোনো অবস্থাতে সমাজের নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানদের, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ বন্ধ বা সীমিত করা যাবে না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির সহ প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও বিএনপির যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি ও চট্টগ্রাম বিভাগ বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ হারুন, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস জাকির হোসেন, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস এসএ এইচ এম জাভেদ, ঢাকা কলেজ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি
আলী আহমদ আলী, ঢাকা কলেজ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি চৌধুরী হাসান জামান মিন্টু, ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক এজিএস
মাজহারুল সোহাগ প্রমূখ।