Friday , 26 April 2024
শিরোনাম

ত্রিশালের বাগান মাদ্রাসায অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি,মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অমান্য,নুরজাহানের খুটির জোর কোথায়

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিঃ
ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার সদর ইউনিয়নে অবস্থিত বাগান ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসার স্বঘোষিত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুরজাহান আক্তারের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে তদন্ত করার জন্য কমিটি গঠন করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আক্তারুজ্জামান।গত ৬ এপ্রিল গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান হচ্ছেন সহকারী কমিশনার (ভূমি)।উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ও উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার কে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা।উক্ত কমিটিকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
অভিযোগ ও মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়,ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নুরজাহান আক্তার এর শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের বৈধ কোন কাগজ পত্র নেই।২০০৫ সালে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে খন্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।পরে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের সেকশন অফিসার মশিউর রহমানের সাথে সু-সম্পর্কের সূত্র ধরে তিনি মাদ্রাসার পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করেন এবং নিজেই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেন।তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর পূর্ববর্তী অধ্যক্ষ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত নন-এমপিও ৩ জন শিক্ষকের পদ শুন্য দেখিয়ে NTCR এর মাধ্যমে নতুন করে তিন জন শিক্ষক নিয়োগ দেন।NTCR এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে পূর্বে নিয়োগ প্রাপ্ত নন-এমপিও ৩ জন শিক্ষক মহামান্য হাইকোর্টে রিট করেন।তাদের রিটে মহামান্য হাইকোর্টে NTCR এর নিয়োগ প্রাপ্ত ৩ জন শিক্ষককের কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন।
তাছাড়া অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আলাউদ্দিন,দাতা সদস্য মঞ্জুরুল হক সরকার, গোলাম সারোয়ার নূরজাহান আক্তারের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব কে চ্যালেঞ্জ করে মহামান্য হাইকোর্টে ৫৫৪৮/১৮ রিট পিটিশন করেন।উক্ত রিট পিটিশনে মহামান্য হাইকোর্ট প্রথমে রুল ও পরবর্তী চুড়ান্ত শুনানিতে নূরজাহান আক্তার কে দায়িত্ব হতে অব্যাহতি দিয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তরের আদেশ দেন।এছাড়া একই নির্দেশ দিয়ে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর,জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দিলেও তিনি মাদ্রাসা বোর্ডের এই প্রভাবশালী চক্রেরের কারণে দায়িত্ব হস্তান্তর করেননি।
জেলার মধ্যে মাদ্রাসা শিক্ষায় সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাগান ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসাটি এখন ধ্বংসের মুখে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে জটিলতার কারণে শিক্ষার্থী শূন্য হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এক সময় সেরা ফলাফলে ময়মনসিংহের শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হলেও গত কয়েক বছর ধরে একজন শিক্ষার্থীও এ প্লাস পাচ্ছেন না। শিক্ষার্থী কমতে কমতে এখন শিক্ষার্থীহীন হয়ে পড়ছে প্রতিষ্ঠানটি। অভিভাবকরা মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থী সরিয়ে নিচ্ছেন। ২০১৬ সালে এই প্রতিষ্ঠানে এক হাজার একশ’র বেশী শিক্ষার্থী থাকলেও ২০২২ সালে এসে ২শ শিক্ষার্থী নিয়ে কোন রকম টিকে আছে প্রতিষ্ঠানটি। এলাকাবাসী মাদ্রাসাটি নিয়ে হতাশায় পড়েছেন। ২০১৭ সালে ভুয়া রেজুলেশনের মাধ্যমে নূরজাহান আক্তার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিজেকে দাবী করার পর থেকে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়াও মাদ্রাসার অধিকাংশ জমি বেখল হয়ে আছে দিনের পর দিন। বেদখল হয়ে থাকা জমিগুলোও উদ্ধারে তৎপরতা না থাকায় অনেকে জমি বিক্রি করতে পায়তারা করছেন।

স্থানীয় প্রশাসন ও মাদ্রাসা সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৫ সালে বাগান ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা ৭ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে মাদ্রাসাটি টিকে ছিল। ২০০৩ সালে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আসাদুল হক অবসরে চলে যান। তৎকালীন ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাহার আলী সাহেব মাদ্রাসার শিক্ষকদের সাথে সভা করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে আনোয়ার সাদতকে দায়িত্ব প্রদান করেন। ২০০৩ সালে তখন মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল একশ এর কম। লেখাপড়া ও অবকাঠামোগত অবস্থান ছিল খুবই নাজুক। ২০০১ ও ২০০৩ সালে আলিম পরীক্ষায় কোন শিক্ষার্থীই পাশ করতে পারেনি।ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে ২০০৪ ও ২০০৬ সালে উপজেলায় সর্বপ্রথম একমাত্র এ প্লাস পায় এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এরপর থেকে এই মাদ্রাসা প্রতি বছরই দাখিল ও আলিম পরীক্ষায় একাধিক শিক্ষার্থী এ প্লাস সহ শতভাগ পাশ করতে থাকে। ধীরে ধীরে শিক্ষার্থী বেড়ে এক হাজার ছাড়িয়ে যায়।অবকাঠামো উন্নয়ন ও ভাল ফলাফলের কারনে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড এখানে পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপনের অনুমতি দেয়।

নতুন করে আলিম বিজ্ঞান,এইচ.এস.সি (বি.এম) ও দাখিল (ভোকঃ) শাখা চালুর অনুমতি পায় প্রতিষ্ঠানটি।বর্তমানে বিএম ও ভোকেশনালে কোন ছাত্রছাত্রী নেই।ময়মনসিংহ জেলার মধ্যে সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি অর্জনে সফল হয় এই প্রতিষ্ঠানটি। ধারাবাহিক সাফল্যের কারণে দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা এসে এই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। প্রতিষ্ঠানটির সাফল্যের কারণে বাগান গ্রামটিও আলোচিত হয়ে ওঠে ত্রিশাল উপজেলার মধ্যে।
১৮/০২/২০১৭ ইং তারিখে কমিটি না থাকায় নূর জাহান আক্তার নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দাবী করেন। নিজেই নিজেকে দক্ষ ও জ্যেষ্ঠ দাবি করে ভুয়া রেজুলেশনের মাধ্যমে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে পাসওয়ার্ড নিয়ে আসেন। পরবর্তীতে এই রেজুলেশন যে ভুয়া ছিল তা প্রমানিত হয়।সিনিয়র শিক্ষকদের অনুপস্থিতি গোপন করে এবং তিন জনের স্বাক্ষর জাল করে রেজুলশন করায় বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ০৪/১০/২০১৬ তারিখে মাদ্রাসার জ্যেষ্ঠ প্রভাষকের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু নূরজাহান আক্তার জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে ৬ষ্ঠ ছিলেন।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে জটিলতা থাকায় মাদ্রাসার কার্যক্রম অচল হয়ে পড়ে।নূরজাহান আক্তার (প্রভাষক জীববিজ্ঞান) নিজেকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদের জন্য দীর্ঘদিন যাবত চক্রান্তে লিপ্ত থাকায় মাদ্রাসায় অনুপস্থিত এবং পাঠদানে অদক্ষতার জন্য ০৫ (পাঁচ) বছরে আলিম বিজ্ঞান শাখায় একজন ছাত্র/ছাত্রীও পাশ করতে পারেনি।তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিজেকে দাবী করার কারণে শিক্ষার্থীরা তার অপসারন চেয়ে বাগান বাজার ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে মানববন্ধন সহ নানা কর্মসূচী পালন করেন। শেষ পর্যন্ত নূরজাহান দায়িত্ব হস্তান্তর না করায় জটিলতা আরো বেড়ে যায়।

দায়িত্ব নিয়ে মাদ্রাসার এফ ডি আর হিসেবে একলক্ষ টাকা ২১ মার্চ/২০১৮ সালে জমা দিয়ে ওই বছরের ৮ এপ্রিল তা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন। বর্তমানে মাদ্রাসার কোন এফ ডি আর নেই। ১৪/০৬/২০১৭ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের জন্য চিঠি দেয়। কিন্তু নূর জাহান আক্তার দায়িত্ব জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের নিকট হস্তান্তর না করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে বহাল থাকেন। ১১ মার্চ/১৯ সালে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর নূর জাহান কে অব্যাহতি দিয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়ার নির্দেশ দেয়। এ নির্দেশ ও পালন না করে নূর জাহান নিজেকেই অধ্যক্ষ দাবী করে চলেন।তিনি সব শিক্ষকের কাছ থেকে মাদ্রাসার মামলা পরিচালনাৱ কথা বলে বেতন থেকে মোট ৯২ হাজার টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করেন।
পরবর্তিতে আরও কয়েকবার শিক্ষকদের নিকট থেকে মোটা অংকের চাদা নেন।
বিগত ৬ বছরে মাদ্রাসার কোন কাজ না করে প্রায় কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন।তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তদন্ত করে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রমানের প্রতিবেদন দাখিল করেন।গত ৪ ফেব্রুয়ারী/২০ জেলা প্রশাসকের দপ্তর থেকে বিধিবহির্ভূতভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনকারী নূরজাহান আক্তারকে অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি পূর্বক জ্যেষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষকের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন।

তিনি জেলা প্রশাসকের এ আদেশও অমান্য করে অধ্যক্ষের দায়িত্ব হস্তান্তরে অনিহা প্রকাশ করেন। গত ৬ জুলাই/২০ ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান ০৫.৪৫.৬১৯৪.০১৪.০১.০০২.১৯৩৬৫ স্মারকমূলে মাদ্রাসার সৃষ্ট অচল অবস্থার জন্য নূর জাহান আক্তারের বিধি বর্হিভূত দায়িত্ব পালন কে চিহ্নিত করে আগামী ০৩ কার্য দিবসের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সহকারী অধ্যাপক/প্রভাষকের নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করার নির্দেশ দেন। তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের আদেশ অমান্য করে তিন কার্যদিবসের পরও স্বপদে বহাল আছেন। তার এ ক্ষমতার দাপট ও খুঁটির জোড় কোথায়? তিনি একক সিদ্ধান্তে অটল আছেন।

Check Also

থাইল্যান্ডের রাজা-রানীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত শেখ হাসিনার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন ফ্রা ভাজিরা-ক্লাওচা-উয়ুয়া এবং রানী সুথিদা বজ্রসুধা-বিমলা-লক্ষণের সঙ্গে সৌজন্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x