Wednesday , 8 May 2024
শিরোনাম

নদী থেকে বালু তুলে টিআর’র প্রকল্পের কাজ; অসময়ে ভাঙ্গণ তিস্তার

আবির হোসেন সজল // লালমনিরহাট:
লালমনিরহাটের আদিতমারীতে টি আর প্রকল্পের রাস্তার কাজে তিস্তা নদীতে অবৈধ মেশিন বসিয়ে বালু তুলে ভরাট করেছেন লালমনিরহাটের আদিতমারীর মহিষখোচা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য নুর আলম। ১৮/২০ দিন নদীতে মেশিন বসিয়ে বালু উঠানোয় অসময়ে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙ্গণ। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ক্ষেত ও বসতভিটা। কাজ সম্পূর্ণ দেখিয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইতিমধ্যে প্রকল্পের অর্ধেক টাকা তুলেও নিয়েছেন তিনি।

এছাড়াও ওই ইউপি সদস্য নদী থেকে কমপক্ষে তিনটি জায়গায় বালু তুলে ব্যবসা করেছেন। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি স্বীকার করে নিজের ভাইয়ের ভিটেতে বালু তোলার কথা জানান অভিযুক্ত ওই ইউপি সদস্য।

সরেজমিনে দেখা যায়, লালমনিরহাটের আদিতমারীর মহিষখোচা ইউপির ৯ নং ওয়ার্ড তিস্তা নদী ঘেষা। এর অনেকাংশ তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত বন্যায় ওই এলাকার চলাচলের একটি কাচা রাস্তায় একাংশে ভাংগন হয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়। সেটি সংস্কারে টিআর প্রকল্পের এক লাখ টাকার বাজেট দেওয়া হয় ওই ওয়ার্ডের সদস্য নুর আলমকে। স্থানীয় গরীব অসহায়দের মাধ্যমে মাটি কেটে তা ভরাটের নিয়ম থাকলেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে তিস্তা নদীতে অবৈধভাবে মেশিন বসিয়ে দীর্ঘ পাইপ দিয়ে বালু তুলে তা ভরাট করে। সেই সুযোগে ১৮/২০ দিনে ৩/৪ টি স্থানে বালুর উচু স্তুপ করে তোলে সেখান থেকে বালু বিক্রিও করে। পরে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে অবৈধ মেশিন বন্ধ করা হয়।
এদিকে তিস্তার তীর ঘেষে দীর্ঘদিন এভাবে বালু উত্তলনের পরে এই অসময়ে ওই এলাকায় তীব্র ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। রাতারাতি পাকা ধান ক্ষেত নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনো ভাঙণ অব্যাহত থাকায় পাশের কয়েকটি বাড়িঘর ও ক্ষেত হুমকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে নদীতে বিলীন হয়েছে কয়েক বিঘা জমি।
এদিকে টিআর প্রকল্পের এক লাখ টাকার কাজ নদী থেকে বালু তুলে ভরাট করে কৌশলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজেটের এক কিস্তি পঞ্চাশ হাজার টাকা তুলেও নিয়েছেন ওই ইউপি সদস্য। বাকি টাকা তোলার তোরজোর করছেন সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।
অভিযোগ উঠেছে উপজেলা জুড়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বাজেটকৃত বিভিন্ন প্রকল্পসহ টিআর, কাবিখার অর্ধকোটি টাকার কাজ চলমান। কিন্তু বেশিরভাগ প্রকল্পে নামকাওয়াস্তে কাজ করে সেই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দশ শতাংশ কমিশনে বিল উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি আওয়ামীলীগ সরকারের বদনামও হচ্ছে।

স্থানী এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, প্রভাব খাটিয়ে ওই মেম্বার বালু তুলে রাস্তার কাজ করেছেন। এছাড়াও বালুর স্তুপ করে ব্যবসাও করেছেন। তাই এই সময়ে নদীর ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। নদীতে যদিও বন্যা বা পানির তোড় তেমন নেই শুধু বালু উত্তলনের কারণে এই ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে।
ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নদী ভাঙিয়া সব শেষ হয়া গেছে। এখানে দশ হাজার টাকা দিয়া জমি বন্দক নিয়া বাড়ি করি আছি। বালু তোলায় হঠাৎ এই সময়ে ভাঙতেছে। ভিটেটা ভাংগি গেইলে কোনটে যামো ঠিক নাই। ভয়ে কোন কথায় বলা যায়না।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য নুর আলম নদী থেকে বালু উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বলেন, আমি রাস্তায় কিছু বালু তুলে ভরাট করে পরে আবার মাটি কেটেছি। আর ভাইয়ের পাঁচ শতক জমিতে বালু তুলেছি।
সরকারী প্রকল্পে নদীর বালু তোলার বিষয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। বালু তোলায় অসময়ে ভাঙ্গণ হয়েছে তা স্বীকার করতে অপারগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, এমনি এমনি নদী ভাংতেছে।

এ বিষয়ে আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মফিজুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। তাকে কয়েকদিন অফিসে ডেকে বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়েছে। পরে অফিসে ডাকলেও তিনি আসেননি। নদী থেকে বালু তুলে প্রকল্পের কাজ করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে বালু তোলার বিষয়টি ইউএনও মহোদয় দেখবেন। এই উপজেলায় কোন সিন্ডিকেট নেই।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জি আর সারোয়ার বলেন, মেশিন দিয়ে বালু তোলার সংবাদ পেয়েই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Check Also

১৩৯ উপজেলায় আজ ভোট, ইসির যত প্রস্তুতি

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোট গ্রহণ বুধবার (৮ মে) অনুষ্ঠিত হবে। …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x