Friday , 3 May 2024
শিরোনাম

বিশ্ব গণমাধ্যমে পদ্মা সেতুকে জাতির গর্ব, সামর্থের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে

: ওয়াশিংটন পোস্ট, অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), ব্লুমবার্গ, আল জাজিরা, এবিসি নিউজ এবং এনডিটিভিসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতুর জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে ‘বাঙালি জাতির গর্ব ও সামর্থ্য’ হিসেবে তুলে ধরেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬.১৫ কিলোমিটার বহুমুখী সেতুটি উদ্বোধন করেছেন যা দেশের ২১টি দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাকে সড়কপথে সংযুক্ত করেছে যার মধ্যদিয়ে জিডিপি ১.২ থেকে ২ শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
ব্লুমবার্গ রিপোর্টের শিরোনাম ‘এক দশক আগে বিশ্বব্যাংকের কর্তৃক বাতিল করা ব্রিজ উদ্বোধন করেছে বাংলাদেশ’ তার উপ-শিরোনামে উল্লেখ করেছে বহুমুখী প্রকল্পটিকে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বিজয় হিসাবে দেখানো হচ্ছে এবং সেতুটি জিডিপি ১ শতাংশেরও বেশি পয়েন্ট বৃদ্ধি করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক গণমাধ্যম ব্লুমবার্গে প্রকাশিত অরুণ দেবনাথের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘২০১২ সালে দুর্নীতির কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণে ১.২ বিলিয়ন ডলারের ঋণ বাতিল করে বিশ্ব ব্যাংক, যে দুর্নীতি কখনোই প্রমাণিত হয়নি বলে জানিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দিন পরে বলেছিলেন সরকার নিজস্ব অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণ করবে।
এতে লেখা হয়েছে: ‘কাজ শুরু হওয়ার আট বছর পর, হাসিনা শনিবার পদ্মা নদীর উপর ছয় কিলোমিটারের (৩.৭ মাইল) বেশি বিস্তৃত সেতুটির উদ্বোধন করেন যার ব্যয় হয়েছে ৩.৮৭ বিলিয়ন ডলার। এটি ৮ কোটি মানুষকে সংযুক্ত করবে যা দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক।
কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা পদ্মা সেতু নিয়ে প্রতিবেদন করেছে শিরোনাম ‘প্রধানমন্ত্রী হাসিনা পদ্মা নদীর উপর বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতুর উদ্বোধন করলেন’ এবং উপ-শিরোনাম ‘বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত ৬.১৫ কিলোমিটার সেতুটি রাজধানীকে দরিদ্র দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে সংযুক্ত করবে।’
আল জাজিরায় ফয়সাল মাহমুদের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংক প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলারের মেগা প্রকল্প থেকে সরে আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা নদীর ওপর প্রমত্তা এই যুগান্তকারী সেতুর উদ্বোধন করেছেন, যা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে দেশের অনুন্নত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত করবে।
এতে বলা হয়, ‘শনিবার বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু পদ্মা সেতুর উদ্বোধন, যাকে ‘জাতীয় গর্বের প্রতীক’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে, যা দক্ষিণ এশীয় এই দেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
২০১২ সালে, বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগের পর প্রকল্পটির জন্য ১.২ বিলিয়ন ঋণ চুক্তি প্রত্যাহার করে।
এটি অনুসরণ করে, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) সহ অন্যান্য দাতারাও এই প্রকল্প থেকে সরে আসে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসিনা সেতুটি নির্মাণ প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, ঘোষণা করেছিলেন যে তার সরকার এই প্রকল্পে নিজস্ব তহবিল দেবে।
তার এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দেশের অর্থনীতিবিদদের পাশাপাশি রাজনৈতিক বিরোধীরা তোপ দাগায় কারণ বহুপাক্ষিক দাতাদের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা ছাড়া এই ধরনের মেগা অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না।
শনিবার এক বিশাল জনসভায় হাসিনা বলেন, ‘কিছু লোক বলেছিল যে আমরা সবসময় পরনির্ভরশীল হব, কিন্তু আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের আত্মসম্মানের গুরুত্ব শিখিয়েছেন।’
তিনি বলেন, এই পদ্মা সেতু ইট-সিমেন্টের স্তুপ নয়, বাংলাদেশের গর্ব, সম্মান ও যোগ্যতার প্রতীক। ‘আমরা বিশ্বকে দেখিয়েছি যে আমরা পারি।’
এটিকে ‘প্রকৌশল বিস্ময়’ হিসাবে আখ্যায়িত করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে সেতুটি নির্মাণ একটি দুর্দান্ত কীর্তি কারণ পদ্মা দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদীর পরে সবচেয়ে ‘অনির্ভরযোগ্য এবং অপ্রত্যাশিত’ নদী।
চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপকে (আরএমবিইজি) প্রায় ১,২০০ বাংলাদেশি প্রকৌশলীর সহায়তায় সেতুটি নির্মাণে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
নদীর তলদেশে ১২২ মিটার (৪০০ ফুট) গভীরে ইস্পাতের পাইলের সাথে সাথে, পদ্মা সেতু বিশ্বের সমস্ত সেতুর মধ্যে গভীরতম পাইলিংয়ের রেকর্ড রয়েছে।
সেতু প্রকল্পের পরিচালক শফিকুল ইসলাম আল জাজিরাকে বলেন, মাওয়া পয়েন্টে (ব্রিজের এক প্রান্ত) প্রতি ২০ সেকেন্ডে যে পানি প্রবাহিত হয় তা ঢাকা শহরে প্রতিদিন ব্যবহৃত মোট পানির সমান।
তিনি আরও বলেন, আমাজনের পরে পদ্মায় বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ¯্রােত রয়েছে। তাই, আমাদের পাইলিংয় করতে হয়েছিল যা বিশ্বের সবচেয়ে পুরু এবং গভীরতম।
ওয়াশিংটন পোস্ট জুলহাস আলমের একটি প্রতিবেদন নিয়েছে, এর শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ দেশের দীর্ঘতম সেতুর উদ্বোধন করেছে’ এবং এতে অর্থনীতিবিদদের মন্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে যে পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন প্রতি বছর অতিরিক্ত ১.৩% বৃদ্ধি করবে, শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি যুক্ত করবে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০২১-২২ সালে ৪৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ৬.৯% প্রবৃদ্ধি হবে এবং ২০২২-২৩ সালে ৭.১% প্রবৃদ্ধি হবে।
জনপ্রিয় ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি ভারতের জাতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর প্রতিবেদনের শিরোনাম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশের দীর্ঘতম রেল-সড়ক সেতুর উদ্বোধন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের বিষয়টি অনেক তাৎপর্য বহন করে, কারণ কাঠামোটি পুরোপুরি অভ্যন্তরীণ অর্থায়নে নির্মিত হয়েছিল, কিছু আর্থিক বিশ্লেষকের অনুমানকে আশঙ্কা করে যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ সম্পদের উপর নির্ভর করে তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে কিনা।
মার্কিন সম্প্রচার নেটওয়ার্ক এবিসি নিউজ বার্তা সংস্থা এপি-এর প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল ‘বাংলাদেশ দেশের দীর্ঘতম সেতুর উদ্বোধন করেছে’।
বহুল প্রচারিত প্রখ্যাত ভারতীয় সংবাদপত্র দ্য হিন্দু শিরোনাম করেছে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করায় ভারত বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানিয়েছে’। এক অভিনন্দন বার্তায় ভারতীয় হাইকমিশন বলেছে ‘পদ্মা সেতু শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগই নয়, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিভিন্ন সরবরাহের উন্নত করবে।
ভারতীয় সংবাদপত্র ইন্ডিয়ান টুডে এবং দ্য ইকোনমিক টাইমসও বাংলাদেশের মেগা ইভেন্টটির সংবাদর প্রকাশ করেছে। বাসস

Check Also

নরসিংদীতে গারদে আটক বন্দীকে খাবার না দেওয়ার অভিযোগ

সাদ্দাম উদ্দিন রাজ নরসিংদী জেলা নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থিত গারদখানার এক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x