Monday , 6 May 2024
শিরোনাম

বোয়ালমারীর রাজাপুর জমে উঠেছে পাটকাঠির হাট

এস এম রুবেল (ফরিদপুর) প্রতিনিধি ঃ ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রামে জমে উঠেছে পাটকাঠির জমজমাট হাট। সপ্তাহে দুই দিন বৃহস্পতিবার ও সোমবার এ হাট বসে থাকে। উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কৃষকেরা পাটকাঠি নিয়ে এ হাটে বিক্রি করে থাকেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, উনিশ শতকের বাংলার মুসলিম জাগরণের অগ্রদূত ও সমাজসেবক নবাব আবদুল লতিফ। তাদের জমিতে রাজাপুর বাজার বা হাটের ব্যবস্থা করেন তার এলাকার মানুষের জন্য। সেখান থেকে হাটের যাত্রা শুরু হয়। মূলত চতুল ও দাদপুরের ইউনিয়নের অধ্যুষিত এলাকায় পানের বরজ আবাদের তির্থস্থান নামেই পরিচিত এ অঞ্চল। বিশেষ করে চতুল ইউনিয়নের রাজাপুর দাদপুর এলাকার কৃষকেরা পানের বরজ বেশি আবাদ করেন । এসব পানের বরজে পাটকাঠির অধিকতর ব্যবহার করা হয়। সে কারণে এ পাটকাঠির হাটে বোয়ালমারী উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকেরা পাটকাঠি এনে বিক্রি করেন। পাটকাঠির প্রকার ভেদে বিভিন্ন দামে বিক্রি করা হয়। ক্রেতা বিক্রেতা পান গণনার মতো পাটকাঠির হিসাব করে থাকে। প্রতি চারটা পাটকাঠিতে এক গোন্ডা। এর আট গোন্ডায় এক পৌন। ষোল পৌনে এক কাওন। এক কাওন ভালো মানের পাটকাঠি বর্তমান বাজার মূল্য ৩০০- ৪০০ টাকা।
চতুল ইউনিয়নের পোয়াইল গ্রামের কৃষক লিয়াকত হোসেন পাটকাঠি বিক্রি করতে এসে বলেন, এবার পাটের ভরা মৌসুমে পানির অভাবে পাট জাগ দিতে হিম শিম খেয়েছি। ফলে পাট পচাতে ব্যয় বহুল খরচ করা হয়েছে। সে খরচের তুলনায় বাজারে পাটকাঠির দাম একবারে কম। এইতো কিছু দিন আগেও যার দাম ছিল পাঁচশ থেকে ছয়শ টাকা, তা এখন কমে তিনশ থেকে চারশত টাকা হয়েছে।
পাটকাঠি ব্যবসায়ী মুনজু মোল্যা বলেন, ফরিদপুর জেলার ভেতর বোয়ালমারী উপজেলার রাজাপুর এলাকায় পাটকাঠির একমাত্র ঐতিহ্যবাহী হাট হিসেবে পরিচিত। এ এলাকায় পানের বরজে পাটকাঠির অধিক ব্যবহারের কারণে সপ্তাহে দুই দিন হাট বসে। স্থানীয় লোকজন ছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারিরা এ হাটে এসে পাটকাঠি ক্রয় করে নিয়ে যায়। অনেকে আবার এ হাটের থেকে পাটকাঠি ক্রয় করে বিভিন্ন স্থানের পান বরজ বা মিল কারখানায় সরবরাহ করে থাকে। পাটকাঠি ব্যবসায়ীরা বিশেষ করে; খুলনা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদাহ, মাগুরা, বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালীসহ অন্যান্য স্থানে সরবরাহ করেন থাকেন।
আইয়ুব মিয়া নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, রাজাপুর এলাকার পান অনেক সুস¦াদু ও মিষ্টি, আর পাটকাঠির হাট হিসেবেও বিখ্যাত। পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলের বিভিন্ন স্থান থেকে পান বরজ ও মিল কারখানার জন্য আমাদের এ হাটে পাটকাঠি কিনতে আসে পাইকারিরা। কুমার নদীর পাশ ঘেঁষে গড়ে ওঠা রাজাপুর হাট। পাইকারি ও মিল কারখানা ব্যবসায়ীরা এ হাটে আগে নদী পথে ট্রলারে পাটকাঠি বহন করে নিয়ে যেত। বর্তমানে বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ও নিচু করে ব্রিজ নির্মান এবং পুনরায় খনন কাজ না করার ফলে পলি মাটি জমে কুমার নদী মরা খালে পরিনিত হয়ে গেছে। সে কারণে বর্তমানে ট্রাক, পিকআপ, নছিমনসহ ইত্যাদি যানবহনে করে বিভিন্ন স্থানে পাটকাঠি সরবরাহ করা হয়।
উপজেলা কৃষিবিদ প্রীতম কুমার হোড় বলেন, বোয়ালমারী উপজেলায় মোট ১৫ হাজার ৫৭০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। এবার ভরা মৌসুমে পানির সংকটে চাষিদের পাট উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়েছিল। তুলনা মূলক এই অতিরিক্ত খরচ পুষিয়ে নিতে পাটকাঠি ব্যপক ভূমিকা রাখছে। ফরিদপরের ভেতরে এটাই একমাত্র পাঠকাঠির হাট হিসেবে পরিচিত।

এস এম রুবেল
ফরিদপুর প্রতিনিধি।
তারিখ ১৯.০৯.২২
মোবাইল ০১৭৯৪-৫৪০৭২৯

Check Also

‘সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে’

সব ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকা সেনানিবাস এলাকায় সশস্ত্র …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x