Saturday , 27 April 2024
শিরোনাম

সিরাজদিখানে খালের প্রবাহ বন্ধ করে বালুভরাট, হুমকিতে ২শ’ একর ফসলি জমি   

এইচ. আই লিংকন, মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি :

মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে খালের প্রবাহ বন্ধ করে বালুভরাটের অভিযোগ উঠেছে সোলায়মান ইসলাম নামে এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়ন পূর্বরাজদিয়া গ্রামে।

জানাযায়,  ইছামতী নদী থেকে উৎস হয়ে রাজদিয়া ও ইছাপুরা পযন্ত প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকায় যুরে প্রবাহিত হত খালের পানি। খাল দিয়ে নদী থেকে জোয়ার-ভাটার পানি আসতো। বর্ষার পানির সঙ্গে পলি এসে বাড়াতো জমির উরবরতা । আবার জমে থাকা বৃষ্টি- নিন্মচাপের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন হত। এ খালের উপর নির্ভর করে প্রতিবছর তিন ফসলের আবাদ করতেন খালের দুই পাশের প্রায় ২ শত একর জমির কয়েকশ কৃষক।সেই খালটি সম্প্রতি বালুভরাট করে পানিপ্রবাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।এর ফলে হুমকিতে পড়েছে দুই শতাধিক ফসলি জমির আবাদ।  স্থানীয় কৃষক বাদশা মিয়া(৪৫) জানান, জ্ঞান হওয়ার পর থেকে কৃষি কাজ করছি। জমিতে তিন পর্যায়ে আলু,শাক-সবজি,ধান,পাটের চাষাবাদ করতাম। ফসল আবাদে রাজদিয়া খালটি আমাদের একমাত্র ভরসা ছিল। খালে বালুভরাট করায় সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা হবে।বছরের অধিকাংশ সময় ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা থাকবে।এ বছর পর থেকে হয়তো আর তিন ফসল করা যাবে না।

সরজমিনে দেখা যায়, পূর্ব রাজদিয়া গ্রাম দিয়ে প্রবাহিত খালটি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।এতে সম্পূর্ণভাবে বন্ধ রয়েছে পানির প্রবাহ। ভরাট করা অংশের মাটি ঠিকঠাক করে ভিটি বানাচ্ছেন ৫-৬ জন ব্যাক্তি।এ সময় ওই ব্যাক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানাযায়,তারা সবাই শ্রমিক।শ্রমিকরা জানন সোলায়মান ইসলাম খালটি ভরাট করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, ৩০-৩৫ ফুট চওড়া খালটির  দৈর্ঘ্য প্রায় ৪ কিলোমিটার। উপজেলার ইছাপুরা ইউনিয়নের ইছামতি নদী থেকে উৎপত্তি হয়ে পূর্বরাজদিয়া,পশ্চিম রাজদিয়া ও ইছাপুরা দিয়ে পোরাগঙ্গা খালের সঙ্গে মিশেছে। কয়েক বছর আগে এখাল দিয়ে নৌকায় করে গ্রামের মানুষজন যাতায়াত করত।আশপাশ এলাকা দিয়ে সড়ক হওয়ার পর মানুষজন সড়ক পথেই যাতায়াত করেন।তবে স্থানীয় পূর্ব রাজদিয়া,পশ্চিম রাজদিয়া বিলের অন্তত দেড় শতাধিকসহ আশপাশের দুইশ একর তিন ফসলি কৃষিজমির চাষাবাদ এ খালের উপর নির্ভর। অথচ গত ১৫-২০ দিন আগে স্থানীয় প্রভাবশালী সোলায়মান ইসলাম প্রবাহিত খালটি নিজেদের সম্পত্তি দাবি করে ভরাট করে ফেলেছে।জনপ্রতিনিধি,ভূমি অফিস সবাই অজানা কারনে নিরব।এতে করে বৃষ্টি মৌসুমে ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা হবে। বর্ষায়ও জমিতে জোয়ারের পানি ডুকবেনা।ফলে হুমকিতে পরেছে  ২ শ একর তিন ফসলি আবাদি জমি।

স্থানীয় বাসিন্দা (৪৫)আয়েশা জানান, তাঁর জন্মের পর থেকে তিনি এটি খাল দেখছেন। ইছামতি নদী হয়ে নৌকায় করে এখাল দিয়ে ইছাপুরা বাজারে যেতেন। এবার বর্ষায়ও এখাল দিয়ে স্রোতের সঙ্গে পানি প্রবাহিত হয়েছে। যিনি ভরাট করেন তিনি প্রভাবশালী।তাই কেউ কিছু বলেনি। খাল ভরাটের বিষয়ে সোলায়মান ইসলাম  বলেন, যে জায়গা ভরাট করেছেন এটি তাদের পৈত্রিক সম্পত্তি। তিনি খাল ভরাট করেননি। খালের ওপর রাস্তা বানানো হয়েছে। বেশি কিছু জানতে হলে ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে দেখেন।

ইছাপুরা ইউপি চেয়ারম্যান সুমন মিয়া বলেন, খালটি ভরাটের বিষয়ে জানতে পেরে স্থানীয় ভূমি অফিস কে অবহিত করেছিন। খাল কারো ব্যক্তিগত সম্পদ হতে পারেনা। ব্যক্তিগত সম্পদ হলেও কৃষিজমি পানি নিষ্কাশনের জন্য হলেও খাল ভরাট করা উচিত নয়। বিষয়টি ইউনিয়ন ভূমি অফিসকে জানানো হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবু সাঈদ শুভ্র বলেন, কৃষকদের কাছ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ করেনি।লিখিত অভিযোগ পেলে দেখবো।

উপজেলা সরকারি কমিশনার (ভূমি) তাসনিম আক্তার  বলেন, রাজিয়া এলাকার কয়েকজন কৃষক অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। সেখানে খাল ভরাটের কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এর ফলে তারা আলু আবাদ করতে পারছেন না। ইতিমধ্যে আমি এই বিষয়টি খোঁজ নিতে সার্ভেয়ার পাঠিয়েছি। যিনি খাল ভরাট করেছেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খাল উদ্ধারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

Check Also

লোকসভা নির্বাচন: ৬১ শতাংশ ভোট পড়েছে দ্বিতীয় ধাপে

ভারতে ১৮তম লোকসভা নির্বাচন চলছে। আজ শুক্রবার ছিল দেশটির দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ। ১৩টি রাজ্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x