স্মৃতিসৌধ ফাঁড়ির ইনচার্জের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ, তবুও আস্থা রেখেছেন পুলিশ সুপার
আশুলিয়া থানাধীন স্মৃতিসৌধ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মাহামুদুল হাসানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্টতাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। তবে গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ফ্যাসিস্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলি করতে দেখা গেলেও অদৃশ্য কারণে বহাল তবিয়তে রয়েছেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা জেলাধীন সাভার থানায় ২০২৩ সালেও কর্মরত ছিলেন উপ-পরিদর্শক মাহামুদুল হাসান। দীর্ঘ দুই বছরের অধিক সময় সাভার থানায় দায়িত্ব পালন করে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আশুলিয়া থানার অধিনস্থ গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ ফাঁড়ি স্মৃতিসৌধ ফাঁড়িতে এক বছরের অধিক সময় ধরে ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাহামুদুল।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের উর্বর ভূমি হিসেবে পরিচিত পাথালিয়া ইউনিয়ন এলাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মাহামুদুল হাসান আওয়ামী সমর্থকদের জন্য উদার মানবিক পুলিশিং পরিচালনা করে থাকেন। ফ্যাসিবাদের দোসরদের ইশারায় এখানে পুলিশি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
স্থানীয়রা জানান, পুলিশের নাকের ডগায় অবাধ চলাফেরার জন্য নিয়মিত মাসোহারা প্রদান করেন ফ্যাসিবাদের দোসররা। এমনকি পুলিশকে টাকা দিয়ে নিজস্ব ব্যবসা বানিজ্য এবং দলীয় কার্যালয় চালিয়ে যাচ্ছেন অনেকে। এখানে ভারত এবং ইউরোপ থেকে বড় বড় ব্যবসা পরিচালিত হয়। স্থানীয় রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এবং পুলিশ কর্মকর্তার ইশারায় এসব চলছে।
এই ফাঁড়ির অধীনে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভার সেনানিবাস, সাভার গলফ ক্লাব, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, পর্যটন হোটেল, র্যাব-৪ ক্যাম্প, গনস্বাস্থ্য কেন্দ্র, গন বিশ্ববিদ্যালয়, মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজ, নবীনগর বাস টার্মিনাল, নয়ারহাট ট্রাক টার্মিনালসহ বিভিন্ন সরকারি স্থাপনা। এছাড়া স্মৃতিসৌধে পুস্পস্তবক অর্পনে প্রতিনিয়ত দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের পদচারণা ঘটে। অন্যদিকে সরকারি পশু খাদ্য গবেষণা কেন্দ্র, সরকারি দুগ্ধ খামার, যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি, সেনাপল্লী, ডিওএইচএস, নিরিবিলি আবাসিক এলাকাসহ জনগণের জানমালের সুরক্ষা নিশ্চিতের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব এই ফাঁড়ির ওপর।
স্থানীয়ের সাথে কথা বলে জানা যায়, শেখ হাসিনার সাজার রায়কে কেন্দ্র করে পরাজিত ফ্যাসিস্টদের লকডাউনের কর্মসূচি সফল করতে সরকারি বিভিন্ন স্থাপনা, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বিভিন্ন যানবাহনে হামলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্মুখ গেট বা পিছনের অরক্ষিত এলাকাকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন গুপ্ত কর্মসূচি পালিত হওয়ার প্রচেষ্টা চালানোর পরিকল্পনা থাকতে পারে। তবে এসব এলাকায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগসহ ফ্যাসিস্ট আমলের বিভিন্ন সুবিধাভোগীদের অবাধ চলাফেরা লক্ষ্যনীয় ভাবে বাড়লেও পুলিশের নির্লিপ্ততা জনমনে প্রশ্নের উদ্রেক ঘটিয়েছে।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে জাবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক এনামের নেতৃত্বে ব্যানার সহকারে কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়। এ ঘটনার ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে বা গ্রেফতারে কোন অভিযান চালাতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে।
এছাড়া পুলিশের ছত্রছায়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পেছনের গ্রামে ঢাকা জেলা উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মনির হোসেন সুজন, ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মঞ্জু সোহেল, যুবলীগের সাবেক ইউনিয়ন সভাপতির ভাই যুবলীগ নেতা তরিকুল ইসলাম, ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা আব্দুল জব্বার, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের পিতা আওয়ামী লীগ নেতা মোতাহার আলী, ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন, গোকুলনগরের যুবলীগ নেতা ফারুক দেওয়ান, পানধোয়ার যুবলীগ নেতা মাসুদ রানা, যুবলীগের সাবেক নেতা ঝুট ব্যবসায়ী রনি দেওয়ান, পাথালিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামিল হোসেন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
জানা যায়, এখনও পাথালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চারিগ্রামের ফজলুল হক ফজা, পাথালিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিপুল দেওয়ান, কুরগাঁও এলাকার ডিশ ব্যাবসায়ী যুবলীগ নেতা সুজন দেওয়ান এবং যুবলীগ নেতা আল ইমরান এলাকার ডিশ ও নেট ব্যবসা পরিচালনা করছেন। তারা সাবেক ইউপি সদস্য সোহাগের মধ্যস্থতায় স্মৃতিসৌধ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক মাহামুদুল হাসানকে মাসোয়ারা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এছাড়া কুরগাঁও এলাকায় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি আলমগীর হোসেন ও পারভেজ দেওয়ানের অনুসারীরা তাদের সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীদের জনসম্মুখে চলাচলে কেউ বিগ্ন ঘটাতে না পারে সেটার নিশ্চয়তা পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে গণবিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক জিএস রলিফের নেতৃত্বে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে মিছিলের প্রচেষ্টা চালানো হতে পারে। এছাড়া ছাত্রলীগের সাবেক সদস্যরা নয়ারহাট ট্রাক স্ট্যান্ড, নবীনগর বাসস্ট্যান্ড ও সেনা সিনেমা হলে হামলা চালাতে পারে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। তবুও নিরব ভূমিকা পালন করছেন ইনচার্জ মাহমুদুল হাসান।
অন্যদিকে মাহমুদুল হাসানের শেল্টারে পাথালিয়া ইউনিয়ন ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মিজান মুক্তার, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম, জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লিটনের পরিবারের সদস্যরা অত্যন্ত গোপনীয়তা রক্ষা করে এলাকায় প্রায়শই আসা যাওয়া করেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক আওয়ামী লীগের শিক্ষকদের ইন্দনে বিভিন্ন অপতৎপরতা চালাতে মরিয়া পতিত স্বৈরাচর। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো আওয়ামী লীগের সমর্থিত ব্যবসায়ীদের সুরক্ষা দিতে, অর্থ লেনদেনে, জমি দখলে সহায়তা প্রদান করেন এই ইনচার্জ। এমনকি ভারত থেকে সাবেক আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামকে এবং ইউরোপ থেকে সাবেক ইউপি সদস্য সোহাগকে ব্যবসা পরিচালনার জন্য সহযোগিতা করেন মাহমুদুল।



























