Thursday , 2 May 2024
শিরোনাম

৫৭ বছরেও সংস্কার হয়নি রাবির জিমনেসিয়াম

রাজশাহী প্রতিনিধি:- শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের যথাযথ বিকাশের জন্য পর্যাপ্ত খেলাধুলা ও ব্যায়ামের প্রয়োজন। এক্ষেত্রে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ ও জিমনেসিয়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। তবে প্রতিষ্ঠার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলেও ৫৭ বছর আগে পাকিস্তান আমলে নির্মিত জিমনেসিয়ামটিতে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৬৫ সালে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর শরীরচর্চা ও খেলাধুলার জন্য জিমনেসিয়ামটি নির্মিত হয়। কিন্তু এখন শিক্ষার্থী বেড়ে ৪০ হাজার হলেও এর অবকাঠামোগত কোনো উন্নয়ন হয়নি। ফলে জিমনেসিয়ামের ভেতরে শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে শরীরচর্চা ও খেলাধুলা করতে হচ্ছে।

১৮ জুন শনিবার সরেজমিনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দেখা যায়, জিমনেসিয়ামের ভেতরের পশ্চিম-দক্ষিণ দিকে বাস্কেট বলের কোর্ট এবং উত্তর-পূর্ব দিকে তাইকোয়ান্দোর কোর্ট করা হয়েছে। এছাড়া ফ্লোরের মাঝখানে ব্যাডমিন্টন খেলা হয়। সবগুলো কোর্ট পাশাপাশি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা খেলতে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা লাগছে।

শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের জন্য জিমনেসিয়ামটিতে রয়েছে একটি ব্যায়ামাগার। আয়তন ছোট হওয়ায় এবং পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি না থাকায় সেখানে আসা সব শিক্ষার্থী একসঙ্গে ব্যায়াম করতে পারছেন না। সুযোগ না পেয়ে অনেক শিক্ষার্থীকে ব্যায়াম না করেই চলে যেতে দেখা গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাকিস্তান আমলে নির্মিত এ জিমনেসিয়ামের ভেতর একসঙ্গে তিনটি খেলা পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হয়। জিমনেসিয়ামের ভেতরে খেলোয়ারদের বিশ্রামাগার ও কোনো অতিথি কক্ষ নেই। ব্যায়ামাগারের অবস্থা আরও শোচনীয়। এসির কোনো ব্যবস্থা নেই, ফ্যান ছিল তাও নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ব্যায়াম শুরুর আগেই শিক্ষার্থীদের ঘাম ঝরতে শুরু করে। ব্যায়ামাগারে শরীরচর্চার পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদিও নেই। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সরঞ্জামাদি কেনার জন্য ১০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছেন। তাও এখনো তা কেনা হয়নি।

শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দাবি, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত উডেন ফ্লোর মাল্টি জিমনেসিয়াম তৈরি করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা ও শরীরচর্চার দিকে আরও মনোনিবেশ করতে পারবেন। সেখানে একসঙ্গে ছয় থেকে সাতটি খেলা পরিচালনা করা যাবে এবং জিমনেসিয়ামের ভেতরেই আবাসন ব্যবস্থা ও অফিস কক্ষ থাকবে।

জিমনেসিয়ামে আসা লোক প্রশাসন বিভাগের দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুল বাশার জিহাদ বলেন, আমাদের জিমনেসিয়ামে ব্যায়ামাগারের অবস্থা খুবই শোচনীয়। পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি না থাকায় একজন ব্যায়াম করলে আরেকজনকে অপেক্ষা করতে হয়। অনেককে ব্যায়াম না করেও হলে ফিরতে হয়। তার ওপরে ফ্যানও নেই ব্যায়ামাগারে।

বাস্কেটবল খেলতে আসা ফার্সি বিভাগের তৃতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী নাইম বলেন, জিমনেসিয়াম ভেতরে অল্প জায়গাতেই আমাদের খেলাধুলা করতে হয়। বাইরে বাস্কেটবলের মাঠেও অনুশীলনের মতো পরিবেশ নেই। জিমনেসিয়ামের পেছনেই আবার ময়লা-আবর্জনা ও ঝোপঝাড়ে ভরা। সেখান থেকে ময়লার দুর্গন্ধ আসে। এছাড়া ঝোপঝাড়ে সাপের আবাস রয়েছে।
জিমনেসিয়ামটি আধুনিকায়নে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সেখানে আসা শিক্ষার্থীরা।

রাবির শারীরিক শিক্ষা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আছাদুজ্জামান বলেন, ১৯৬৫ সালে যখন জিমনেসিয়ামটি প্রতিষ্ঠিত হয় তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ হাজার। এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪০ হাজার হওয়ায় এ জিমনেসিয়ামে জায়গা হচ্ছে না। উডেন ফ্লোর মাল্টি জিমনেসিয়াম নির্মাণ করার জন্য ইউজিসির কাছে আবেদন জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য। সেখানে বিভিন্ন রকম খেলার ব্যবস্থা, আবাসন ব্যবস্থা ও জিমনেসিয়ামের অফিস থাকবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে রাবিতে কোনো স্বতন্ত্র ব্যায়ামাগার নেই। এখানে একসঙ্গে ৩০ জনের মতো ব্যায়াম করতে পারে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর তুলনায় একেবারেই কম।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সরকার ও ইউজিসির কাছে জিমনেসিয়ামের পরিধি বাড়ানো ও আধুনিকায়নের দাবি জানান তিনি।

Check Also

নরসিংদীতে গারদে আটক বন্দীকে খাবার না দেওয়ার অভিযোগ

সাদ্দাম উদ্দিন রাজ নরসিংদী জেলা নরসিংদী জেলা ও দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে অবস্থিত গারদখানার এক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x