ঢাকা , রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
শাহজালালে যাত্রীর সঙ্গে ঢুকতে পারবেন ২ জন, আজ থেকে কার্যকর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, তারেক-বাবরের খালাসের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি আজ ভোলায় জুলাই পুনর্জাগরণ অনুষ্ঠানমালা অনুষ্ঠিত- জেলা প্রশাসন, সমাজসেবা ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে উৎসবমুখর আয়োজন শিগগিরই গঠিত হচ্ছে তথ্য কমিশন হরিপুরে বৃক্ষ রোপন  কর্মসূচির উদ্ধোধন মোবাইল অপসংস্কৃতি রুখে মুক্ত সংস্কৃতির বিকাশে মতলব উত্তরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ ৪-৫ দিনের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন প্রধান উপদেষ্টা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আরও ১৪ দলের বৈঠক আজ হাউজিং প্রকল্পে ভূমি অধিগ্রহণে নিতে হবে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন “জুলাই পুনর্জাগরণে সমাজ গঠনে লাখো কণ্ঠে শপথ পাঠ” অনুষ্ঠান ফরিদগঞ্জে অনুষ্ঠিত

১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের টার্গেটে এগোচ্ছে সরকার

সাংবাদিক

মাইলস্টোনের ঘটনার পরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকেও বিভিন্ন দলের নেতারা সরকারের বেশ কিছু ব্যর্থতা কড়া ভাষায় তুলে ধরেছেন। তারা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে মনোযোগ নিবদ্ধ করতে সরকারকে পরামর্শ দেন। জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ সরকার আমলে নিয়েছে।

নির্বাচনের বিকল্প ভাবছে না অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সংসদ নির্বাচন করার প্রাথমিক লক্ষ্য ঠিক করে এগোচ্ছে সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর তরফ থেকে মাঝে মাঝে শঙ্কা প্রকাশ করা হলেও, ‘অহেতুক’ ক্ষমতায় দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকার কোনো বাসনা ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারের নেই বলে ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত কিছু ঘটনায় সরকার কিছুটা বিব্রত বোধ করেছে বলেও সূত্রগুলো জানিয়েছে। সরকারের ওপর জনগণের আস্থায় চিড় ধরুক তা চান না অনেক উপদেষ্টা। এ ছাড়া মাইলস্টোনের ঘটনার পরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকেও বিভিন্ন দলের নেতারা সরকারের বেশ কিছু ব্যর্থতা কড়া ভাষায় তুলে ধরেছেন। তারা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে মনোযোগ নিবদ্ধ করতে সরকারকে পরামর্শ দেন। জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ সরকার আমলে নিয়েছে। শুধু সঙ্কটে নয়, আগামী দিনে তারা রাজনৈতিকদলগুলোর সাথে সম্পর্ক বাড়ানোরও পরিকল্পনা করছে।

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের এই পথ চলা সহজ ছিল না। কারণ পুরো দেশটা ছিল দৃশ্যত যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থার মতো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। প্রশাসনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে জনগণের রোষানলে থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা ঘটনা ঘটতে থাকে। এর পাশাপাশি শেখ হাসিনা সরকারের নানা ‘ব্যাকলগ’ও টানতে হয় তাদের। এমন একটি অবস্থা থেকে দেশকে পুরোপুরি না হোক মোটামুটি পর্যায়ে স্থিতিশীল করতে বর্তমান সরকারকে বেশ বেগ পেতে হয়। এতে কেটে যায় প্রায় ছয় মাস। এরপর রাষ্ট্র সংস্কারের দিকে নজর দেয় সরকার। যা এখন জুলাই সনদ ঘোষণার পর্যায়ে রয়েছে। আগস্টের মধ্যেই সরকার এই ঘোষণা দিতে চায়। এ ছাড়া গণহত্যার বিচারের দিকেও রয়েছে সরকারের ফোকাস। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারের এই কার্যক্রমের মধ্যেই নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা দেখা দেয়। তারা সরকারের কাছে একটি রোডম্যাপ দাবি করে সোচ্চার হয়। দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ জুন ঈদুল আজহার আগের দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সরকারপ্রধানের এই ঘোষণা বিএনপি মেনে নিতে পারেনি। এ নিয়ে দলটির নেতারা প্রকাশ্যেই অসন্তুষ্টির কথা জানান। অবশ্য সরকার ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের সময় নির্ধারণের জন্য উপদেষ্টাদের কেউ কেউ জাতির উদ্দেশে ভাষণের আগে অধ্যাপক ইউনূসকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এপ্রিলকে উপযুক্ত মনে করেছিলেন।

তবে ঈদুল আজহার এক সপ্তাহ পর লন্ডন সফরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর নির্বাচন নিয়ে বিএনপি স্বস্তি প্রকাশ করে। ওই বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা আসে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নির্বাচন নিয়ে আবারো এক ধরনের অনিশ্চয়তার ঈঙ্গিত দিচ্ছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন বিলম্ব করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ আসে বিএনপির তরফ থেকে। গত ৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে হবে। আগামী নির্বাচনে ভোটারদের যেন একটা ভালো অভিজ্ঞতা হয়, একটা সুন্দর স্মৃতি থাকে, সেজন্য ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ আরো কিছু দলের তরফ থেকে প্রকাশ করা আস্থা ও অনাস্থার মধ্যেই গত সোমবার ঢাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশুদের হতাহতের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুরো জাতি শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। উদ্ভূত পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে বেশ বেগ পেতে হয়। সরকারের সক্ষমতা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন। একইসাথে প্রশ্ন উঠে জনবহুল এলাকায় কেন যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এবং ঘটনার দায় কার? রাজনীতিকদের কেউ কেউ বলেন, এই দুর্ঘটনায় সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে। পাশাপাশি নানামুখী গুজব মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও মৃত্যু সংখ্যা নিয়ে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দেয়। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার স্কুলে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের মধ্যে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আববার ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম স্কুলটিতে গেলে বিক্ষোভকারীরা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। উপদেষ্টারা ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশের কড়া পাহারায় বেরিয়ে আসেন। আর সচিবালয়ে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে হয়েছে পুলিশকে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে আসায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ওই বিক্ষোভে রূপ নিয়েছিল। এই বিক্ষোভে নেপথ্যে থেকে পতিত আওয়ামী লীগের লোকজন ইন্ধন দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কয়েকজনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতারও করা হয়।

জানা গেছে, অনাকাঙ্খিত এসব ঘটনায় সরকার কিছুটা বিব্রত হয়েছে। মাইলস্টোনের ঘটনার পরপরই ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করেন। দুই দিনের বৈঠকে নেতারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের জন্য কোনো কোনো দল সরকারকে দায়ী করে বৈঠকে বক্তব্য রাখে। সংস্কার ও সঠিক সময়ে নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে সংশয়ের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়। বৈঠকের পর একটি দলের নেতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দুই উপদেষ্টার ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকা এবং একইসাথে সচিবালয়ে বিশৃঙ্খলা দেখে মনে হয়েছে, উপদেষ্টাদের প্রতি জনগণের অনাস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। এ দু’টি ঘটনার মাধ্যমে সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।’

জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার সামনে এগোচ্ছে। তাদের মূল টার্গেট নির্বাচন। সেটি ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।

সূত্রঃ নয়াদিগন্ত

 

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ০৫:২৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫
৫১৫ Time View

১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের টার্গেটে এগোচ্ছে সরকার

আপডেটের সময় : ০৫:২৯:৪৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

মাইলস্টোনের ঘটনার পরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকেও বিভিন্ন দলের নেতারা সরকারের বেশ কিছু ব্যর্থতা কড়া ভাষায় তুলে ধরেছেন। তারা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে মনোযোগ নিবদ্ধ করতে সরকারকে পরামর্শ দেন। জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ সরকার আমলে নিয়েছে।

নির্বাচনের বিকল্প ভাবছে না অন্তর্বর্তী সরকার। ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সংসদ নির্বাচন করার প্রাথমিক লক্ষ্য ঠিক করে এগোচ্ছে সরকার। রাজনৈতিক দলগুলোর তরফ থেকে মাঝে মাঝে শঙ্কা প্রকাশ করা হলেও, ‘অহেতুক’ ক্ষমতায় দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকার কোনো বাসনা ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন সরকারের নেই বলে ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত কিছু ঘটনায় সরকার কিছুটা বিব্রত বোধ করেছে বলেও সূত্রগুলো জানিয়েছে। সরকারের ওপর জনগণের আস্থায় চিড় ধরুক তা চান না অনেক উপদেষ্টা। এ ছাড়া মাইলস্টোনের ঘটনার পরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকেও বিভিন্ন দলের নেতারা সরকারের বেশ কিছু ব্যর্থতা কড়া ভাষায় তুলে ধরেছেন। তারা নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে মনোযোগ নিবদ্ধ করতে সরকারকে পরামর্শ দেন। জানা গেছে, রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ সরকার আমলে নিয়েছে। শুধু সঙ্কটে নয়, আগামী দিনে তারা রাজনৈতিকদলগুলোর সাথে সম্পর্ক বাড়ানোরও পরিকল্পনা করছে।

৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের এই পথ চলা সহজ ছিল না। কারণ পুরো দেশটা ছিল দৃশ্যত যুদ্ধবিধ্বস্ত অবস্থার মতো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। প্রশাসনে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ফ্যাসিবাদী শাসনের কারণে জনগণের রোষানলে থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নানা ঘটনা ঘটতে থাকে। এর পাশাপাশি শেখ হাসিনা সরকারের নানা ‘ব্যাকলগ’ও টানতে হয় তাদের। এমন একটি অবস্থা থেকে দেশকে পুরোপুরি না হোক মোটামুটি পর্যায়ে স্থিতিশীল করতে বর্তমান সরকারকে বেশ বেগ পেতে হয়। এতে কেটে যায় প্রায় ছয় মাস। এরপর রাষ্ট্র সংস্কারের দিকে নজর দেয় সরকার। যা এখন জুলাই সনদ ঘোষণার পর্যায়ে রয়েছে। আগস্টের মধ্যেই সরকার এই ঘোষণা দিতে চায়। এ ছাড়া গণহত্যার বিচারের দিকেও রয়েছে সরকারের ফোকাস। তবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারের এই কার্যক্রমের মধ্যেই নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের শঙ্কা দেখা দেয়। তারা সরকারের কাছে একটি রোডম্যাপ দাবি করে সোচ্চার হয়। দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ জুন ঈদুল আজহার আগের দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে।

নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে সরকারপ্রধানের এই ঘোষণা বিএনপি মেনে নিতে পারেনি। এ নিয়ে দলটির নেতারা প্রকাশ্যেই অসন্তুষ্টির কথা জানান। অবশ্য সরকার ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা গেছে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচনের সময় নির্ধারণের জন্য উপদেষ্টাদের কেউ কেউ জাতির উদ্দেশে ভাষণের আগে অধ্যাপক ইউনূসকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এপ্রিলকে উপযুক্ত মনে করেছিলেন।

তবে ঈদুল আজহার এক সপ্তাহ পর লন্ডন সফরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর নির্বাচন নিয়ে বিএনপি স্বস্তি প্রকাশ করে। ওই বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে ঘোষণা আসে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে আগামী বছরের রমজান মাসের আগে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে নির্বাচন নিয়ে আবারো এক ধরনের অনিশ্চয়তার ঈঙ্গিত দিচ্ছেন বিভিন্ন দলের নেতারা। কোনো কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচন বিলম্ব করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ আসে বিএনপির তরফ থেকে। গত ৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারি অথবা এপ্রিলে হবে। আগামী নির্বাচনে ভোটারদের যেন একটা ভালো অভিজ্ঞতা হয়, একটা সুন্দর স্মৃতি থাকে, সেজন্য ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ আরো কিছু দলের তরফ থেকে প্রকাশ করা আস্থা ও অনাস্থার মধ্যেই গত সোমবার ঢাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিশুদের হতাহতের মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুরো জাতি শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। উদ্ভূত পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারকে বেশ বেগ পেতে হয়। সরকারের সক্ষমতা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তোলেন। একইসাথে প্রশ্ন উঠে জনবহুল এলাকায় কেন যুদ্ধবিমান চালানোর প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে এবং ঘটনার দায় কার? রাজনীতিকদের কেউ কেউ বলেন, এই দুর্ঘটনায় সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা কমেছে। পাশাপাশি নানামুখী গুজব মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীদেরও মৃত্যু সংখ্যা নিয়ে সন্দেহের মধ্যে ফেলে দেয়। এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার স্কুলে বিক্ষোভ করেন। বিক্ষোভের মধ্যে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আববার ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম স্কুলটিতে গেলে বিক্ষোভকারীরা তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে। উপদেষ্টারা ৯ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশের কড়া পাহারায় বেরিয়ে আসেন। আর সচিবালয়ে বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে হয়েছে পুলিশকে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে আসায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ওই বিক্ষোভে রূপ নিয়েছিল। এই বিক্ষোভে নেপথ্যে থেকে পতিত আওয়ামী লীগের লোকজন ইন্ধন দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কয়েকজনকে ঘটনাস্থল থেকে গ্রেফতারও করা হয়।

জানা গেছে, অনাকাঙ্খিত এসব ঘটনায় সরকার কিছুটা বিব্রত হয়েছে। মাইলস্টোনের ঘটনার পরপরই ড. ইউনূস রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করেন। দুই দিনের বৈঠকে নেতারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনৈক্যের জন্য কোনো কোনো দল সরকারকে দায়ী করে বৈঠকে বক্তব্য রাখে। সংস্কার ও সঠিক সময়ে নির্বাচন নিয়ে জনগণের মধ্যে সংশয়ের বিষয়টি প্রধান উপদেষ্টাকে জানানো হয়। বৈঠকের পর একটি দলের নেতা সাংবাদিকদের বলেন, ‘উত্তরার মাইলস্টোন কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দুই উপদেষ্টার ৮ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকা এবং একইসাথে সচিবালয়ে বিশৃঙ্খলা দেখে মনে হয়েছে, উপদেষ্টাদের প্রতি জনগণের অনাস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। এ দু’টি ঘটনার মাধ্যমে সরকারের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।’

জানা গেছে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার সামনে এগোচ্ছে। তাদের মূল টার্গেট নির্বাচন। সেটি ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।

সূত্রঃ নয়াদিগন্ত