ঢাকা , সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
মানিকগঞ্জে জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে আগুন প্লট বরাদ্দে জালিয়াতি- হাসিনার সঙ্গে রেহানা ও টিউলিপের কারাদণ্ড রিয়াদে প্রবাসী চাঁদপুর জেলা বিএনপির উদ্যোগে সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদার রোগ মুক্তি কামনায়দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত শারিরীকভাবে অসুস্থ আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামানায় প্রবাসী নোয়াখালী জেলা বিএনপি সৌদি আরব পূর্বাঞ্চল এর আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইউএনও প্রদিপ্ত রায় দীপনের আকস্মিক পরিদর্শন খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর চিঠি খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে রাষ্ট্রপতির উদ্বেগ দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত একক নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, জানালেন তারেক রহমান ব্যাটিং বিপর্যয়ে হার, বিফলে হৃদয়ের ঝড়ো ফিফটি হাসিনার প্লট দুর্নীতি: বেআইনি-একাধিক প্লট ভোগকারীকে শনাক্তের নির্দেশ

স্ত্রীর লাশ ফ্রিজে রেখে নজরুল মেয়েকে বলেছিলেন ‘মা অন্যের সঙ্গে পালিয়েছে’

সাংবাদিক

রাজধানীর কলাবাগানে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রেখে দেয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী মো. নজরুল ইসলামকে (৫৯) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে লুকিয়ে রেখে নজরুল মেয়েকে বলেছিলেন ‘মা অন্যের সঙ্গে পালিয়েছে’।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে বংশাল থানাধীন নবাবপুর রোড এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বুধবার (১৫ অক্টোবর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রী তাসলিমা আক্তার (৪২) অন্যের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছেন বলে সন্দেহ করতেন নজরুল। এছাড়াও স্ত্রী তার সম্পত্তি হাতিয়ে নেবে বলেও ভয় পেতেন। এমতবস্থায় রোববার (১২ অক্টোবর) রাত ১১ টার দিকে নজরুল ইসলাম কলাবাগান থানাধীন ১ম লেনে অবস্থিত ২৪ নং বাসার ভাড়াকৃত ৬ (বি) ফ্ল্যাটে ফিরে দেখেন ফ্ল্যাটের দরজার তিনটি লকের মধ্যে দুটি খোলা।  এতে উত্তেজিত হয়ে রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত স্ত্রীকে মাথায় ধারালো দা দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। এরপর লাশটি গামছা দিয়ে বেঁধে, বিছানার চাদর ও ওড়না দিয়ে মুড়িয়ে বাসার ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন। পরবর্তীতে রক্তমাখা তোষক উল্টিয়ে, মেঝে পরিষ্কার করে এবং নিজের জামাকাপড় ধুয়ে আলামত গোপনের চেষ্টা করেন।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, পরদিন সকালে নজরুল ইসলাম তার বড় মেয়ে নাজনীন আক্তারকে জানান, তাদের মা অন্য পুরুষের সঙ্গে পালিয়েছে। এ সময় নাজনীন আক্তার ঘরের দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পায়। এরপর নজরুল ইসলাম তার দুই মেয়েকে নানার বাড়ি রেখে আসার কথা বলে রাজধানীর আদাবরে তাদের ফুফুর বাসায় রেখে নিজের প্রাইভেটকারে করে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সন্দেহ হলে ভিকটিমের ছোট ভাই নাঈম হোসেন ও ভিকটিমের দুই মেয়ে সোমবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কলাবাগান থানায় এসে অভিযোগ দেয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলাবাগান থানা পুলিশের একটি টিম ভিকটিমের  ফ্ল্যাটে উপস্থিত হয়ে ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ঘরের মধ্যে রাখা ডিপ ফ্রিজ খুলে ওপরের থেকে মাছ-মাংস সরালে চাদর দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় ভিকটিম তাসলিমা আক্তারের মৃতদেহ দেখতে পায় পুলিশ। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন  ও সিআইডির ক্রাইম সিন টিমের সহায়তায় কলাবাগান থানা পুলিশ ডিপ ফ্রিজের ভিতর থেকে হাত-পা ও মুখ বাধা অবস্থায় ভিকটিমের মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওইদিন রাতে ভিকটিমের ছোট ভাই নাঈম হোসেন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

জানা গেছে, মামলার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় কলাবাগান থানা পুলিশ  ভিকটিমের স্বামী মো. নজরুল ইসলামের অবস্থান শনাক্ত করে। পরবর্তীতে মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিজ বাসার ওয়্যারড্রোব হতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারের নজরুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, নজরুল ইসলাম ও তাসলিমা আক্তার দম্পতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল। নজরুল ইসলাম অবৈধ সম্পর্কের সন্দেহে স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। এমনকি তিনি ভয় পেতেন যে স্ত্রী তার সম্পত্তি ও ব্যাংকে রাখা অর্থ হাতিয়ে নেবেন। এই চরম সন্দেহ ও নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা থেকেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্যাগ :

সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

আপডেটের সময় : ১০:১২:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
১২০৩ Time View

স্ত্রীর লাশ ফ্রিজে রেখে নজরুল মেয়েকে বলেছিলেন ‘মা অন্যের সঙ্গে পালিয়েছে’

আপডেটের সময় : ১০:১২:১২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

রাজধানীর কলাবাগানে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রেখে দেয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত স্বামী মো. নজরুল ইসলামকে (৫৯) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে লুকিয়ে রেখে নজরুল মেয়েকে বলেছিলেন ‘মা অন্যের সঙ্গে পালিয়েছে’।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে বংশাল থানাধীন নবাবপুর রোড এলাকায় সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বুধবার (১৫ অক্টোবর) পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রী তাসলিমা আক্তার (৪২) অন্যের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়েছেন বলে সন্দেহ করতেন নজরুল। এছাড়াও স্ত্রী তার সম্পত্তি হাতিয়ে নেবে বলেও ভয় পেতেন। এমতবস্থায় রোববার (১২ অক্টোবর) রাত ১১ টার দিকে নজরুল ইসলাম কলাবাগান থানাধীন ১ম লেনে অবস্থিত ২৪ নং বাসার ভাড়াকৃত ৬ (বি) ফ্ল্যাটে ফিরে দেখেন ফ্ল্যাটের দরজার তিনটি লকের মধ্যে দুটি খোলা।  এতে উত্তেজিত হয়ে রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত স্ত্রীকে মাথায় ধারালো দা দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। এরপর লাশটি গামছা দিয়ে বেঁধে, বিছানার চাদর ও ওড়না দিয়ে মুড়িয়ে বাসার ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন। পরবর্তীতে রক্তমাখা তোষক উল্টিয়ে, মেঝে পরিষ্কার করে এবং নিজের জামাকাপড় ধুয়ে আলামত গোপনের চেষ্টা করেন।

পুলিশ আরও জানিয়েছে, পরদিন সকালে নজরুল ইসলাম তার বড় মেয়ে নাজনীন আক্তারকে জানান, তাদের মা অন্য পুরুষের সঙ্গে পালিয়েছে। এ সময় নাজনীন আক্তার ঘরের দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পায়। এরপর নজরুল ইসলাম তার দুই মেয়েকে নানার বাড়ি রেখে আসার কথা বলে রাজধানীর আদাবরে তাদের ফুফুর বাসায় রেখে নিজের প্রাইভেটকারে করে পালিয়ে যান। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সন্দেহ হলে ভিকটিমের ছোট ভাই নাঈম হোসেন ও ভিকটিমের দুই মেয়ে সোমবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় কলাবাগান থানায় এসে অভিযোগ দেয়। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলাবাগান থানা পুলিশের একটি টিম ভিকটিমের  ফ্ল্যাটে উপস্থিত হয়ে ফ্ল্যাটের দরজার তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ঘরের মধ্যে রাখা ডিপ ফ্রিজ খুলে ওপরের থেকে মাছ-মাংস সরালে চাদর দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় ভিকটিম তাসলিমা আক্তারের মৃতদেহ দেখতে পায় পুলিশ। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবারের লোকজন  ও সিআইডির ক্রাইম সিন টিমের সহায়তায় কলাবাগান থানা পুলিশ ডিপ ফ্রিজের ভিতর থেকে হাত-পা ও মুখ বাধা অবস্থায় ভিকটিমের মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে ভিকটিমের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওইদিন রাতে ভিকটিমের ছোট ভাই নাঈম হোসেন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

জানা গেছে, মামলার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় কলাবাগান থানা পুলিশ  ভিকটিমের স্বামী মো. নজরুল ইসলামের অবস্থান শনাক্ত করে। পরবর্তীতে মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিজ বাসার ওয়্যারড্রোব হতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারের নজরুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, নজরুল ইসলাম ও তাসলিমা আক্তার দম্পতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল। নজরুল ইসলাম অবৈধ সম্পর্কের সন্দেহে স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। এমনকি তিনি ভয় পেতেন যে স্ত্রী তার সম্পত্তি ও ব্যাংকে রাখা অর্থ হাতিয়ে নেবেন। এই চরম সন্দেহ ও নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা থেকেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে।