Sunday , 28 April 2024
শিরোনাম

দুই কিলোমিটার লম্বা রেলগাড়ি!

পাহাড়ের গা বেয়ে বিশাল সাপের মতো পেঁচিয়ে রয়েছে ট্রেন। এক ঝলক দেখলে তাকে ট্রেন বলে না-ও চিনতে পারেন অনেকে। কারণ ট্রেন সচরাচর এত লম্বা হয় না।

দেশে রেলওয়ে চালুর ১৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে অভূতপূর্ব এক কাজ করেছে সুইজারল্যান্ডে। প্রায় দুই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি রেলগাড়ি তৈরি করে সেটি আল্পসের পাহাড়ি পথে চালিয়ে রেকর্ড তৈরি করেছে তারা।

সুইৎজ়ারল্যান্ডে তৈরি এই ট্রেনটি বিশ্বের দীর্ঘতম প্যাসেঞ্জার ট্রেন। এমনই দাবি প্রস্তুতকারী সংস্থার। ট্রেনটি ১.৯ কিলোমিটার লম্বা। আল্পস পর্বতের গা বেয়ে ছুটে চলা এই ট্রেনটিকে দূর থেকে বিশাল অ্যানাকোন্ডা বলেও মনে হয়েছে অনেকের।

সুইৎজ়ারল্যান্ডের রিশান রেলওয়ে কোম্পানি এই ট্রেনটি তৈরি করেছে। তাদের দাবি, এটিই পৃথিবীর দীর্ঘতম প্যাসেঞ্জার ট্রেন। সম্প্রতি আল্পস পর্বতের গাঁ ঘেঁষে ট্রেনটি প্রথম চালিয়েছে ওই সংস্থা।

গত শনিবার সুইৎজারল্যান্ডের আলবুলা জেলায় রাষ্ট্রপুঞ্জ মনোনীত যাত্রাপথে প্রেদা থেকে বারগুন পর্যন্ত চালানো হয় ট্রেনটিকে। সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে নেটমাধ্যমেও।

ট্রেনটিতে মোট কামরার সংখ্যা ১০০। মোট আসন সংখ্যা ৪,৫৫০টি। এই ট্রেনের ওজন প্রায় ৩ হাজার টন। ২৫টি সুইস ‘ক্যাপ্রিকর্ন’ ইলেকট্রিক ট্রেন জুড়ে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ১,৯০৬ মিটার দৈর্ঘ্যের এ ট্রেনটি। প্রথম যাত্রার দিন এই ট্রেনটি শুধু মাত্র দেখার জন্য টিকিট কেটেছিলেন ৩ হাজার মানুষ। বিশ্বের দীর্ঘতম ট্রেন নিয়ে তাদের উৎসাহের অন্ত ছিল না।

প্রেদা থেকে বারগুনের দূরত্ব ২৫ কিলোমিটার। এই রাস্তা যেতে ট্রেনটির সময় লেগেছিল প্রায় ১ ঘণ্টা। পাহাড়ের উঁচু-নিচু খাঁজ এবং একাধিক চড়াই-উৎরাইয়ে ভরা ছিল পথটি। সঙ্কীর্ণ পথে রেললাইনের উপর দিয়ে এঁকেবেঁকে ছুটেছে দীর্ঘতম রেলগাড়ি।

বারগুনের কাছে একটি বড় স্ক্রিন বসানো হয়েছিল। সেখানেই দেখানো হয় আল্পস পর্বতের কোলে ট্রেনটির গতিবিধি। হাজার তিনেক মানুষ সেই বড় স্ক্রিনের সামনে বসে টিকিট কেটে ট্রেন দেখেছেন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ট্রেনের যে গতিপথ নির্দিষ্ট করা হয়েছে, তাতে রয়েছে মোট ২২টি সুড়ঙ্গ এবং ৪৮টি সেতু। পাহাড়ের মাঝে সে সব আঁকাবাঁকা সুড়ঙ্গের মধ্যে ট্রেনের গতিপথ যাত্রীদের রোমাঞ্চিত করবে বলে দাবি নির্মাতাদের।

কীভাবে তৈরি করা হল এত বড় ট্রেন? জানা গিয়েছে, মোট ২৫টি ছোট ছোট একক ট্রেন পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করে এই প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি বানানো হয়েছে। সুইস সংস্থা রিশান রেলওয়ের অজস্র কর্মীর দীর্ঘ দিনের পরিশ্রমের ফসল এই ট্রেন।

প্রথম যাত্রায় ট্রেনটিতে যাত্রীদের চড়ার ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে একেবারে খালি কামরা নিয়েও ছোটেনি দীর্ঘতম এই প্যাসেঞ্জার ট্রেন। প্রথম দিন ট্রেনটিতে ছিলেন নির্মাণকারী সংস্থার মোট ২১ জন প্রযুক্তিবিদ।

ট্রেনটিতে ছিলেন মোট ৮ জন চালক। যে ২৫টি ট্রেন যুক্ত করে বড় ট্রেনটি বানানো হয়েছে, সেগুলি যাতে একসঙ্গে রেললাইনের উপর থাকে, ট্রেনের যাত্রা যাতে সুরক্ষিত হয়, তা নিশ্চিত করেছিলেন তারা।

ট্রেনের একেবারে শুরুতে যে চালক বসে ছিলেন, সমগ্র ট্রেনটির গতিবিধি তিনিই নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। ট্রেন কখন থামবে, কখন গতি বাড়াবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার ছিল তার হাতেই।

চলতি বছর সুইজারল্যান্ডের রেল পরিবহণ ১৭৫তম বর্ষপূর্তি পালন করছে। সেই উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানে বিশেষ এই প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি চালিয়েছে রেল।

সুইৎজারল্যান্ডে প্রথম ট্রেন চলেছিল ১৮৪৭ সালের ৯ আগস্ট। জুরিখ থেকে বেডেন পর্যন্ত এলাকা প্রথম রেলপথের মাধ্যমে সংযুক্ত হয়েছিল। তার ১৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করছে দেশের রেল কর্তৃপক্ষ।

এর আগে বিশ্বের দীর্ঘতম প্যাসেঞ্জার ট্রেনের রেকর্ড ছিল বেলজিয়ামের দখলে। তারও আগে দীর্ঘতম প্যাসেঞ্জার ট্রেন বানিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। এ বার সেই রেকর্ড ভেঙে দিল সুইজারল্যান্ড।

ইউরোনিউজ জানিয়েছে, রেকর্ড-ব্রেকিং যাত্রার পর ট্রেনটি খুলে ফেলা হবে। এ ট্রেনগুলো আবার নিয়মিত যাত্রী পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হবে।

সুইজারল্যান্ডকে বলা হয় রেলপথের জাতি। ছোট এ দেশটিতে পর্বতে ও উচ্চভূমিতে পরিপূর্ণ। কিন্তু এরকম দুর্গম ভূমিতেও বিস্তৃত রেল নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পেরেছে সুইজারল্যান্ড।

Check Also

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় সনাতন সেবা সংঘের অভিষেক অনুষ্ঠিত

দিলীপ কুমার দাস নিজস্ব প্রতিবেদক ।   ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার বিসকা বাথুয়াদী শ্রী শ্রী রাধাকৃষ্ণ …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x