সাভারের ছাত্র হত্যার সেই সুজন চেয়ারম্যানের আত্মহত্যা
নুর আলম সিদ্দিকী মানু, বাংলা ৫২ নিউজ।। সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা সাইদুর রহমান সুজন (৪৫) ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে (কেরানীগঞ্জ) আত্মহত্যা করেছেন।
রোববার (১৫ জুন) সকাল ১১টার দিকে কারাগারের ‘সূর্যমুখী ভবনের’ একটি কক্ষে তিনি গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাকে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে কারা হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ইন্সপেক্টর মো. ফারুক নিশ্চিত করেছেন।
আত্মহত্যার মুহূর্ত
কারা মহাপরিদর্শক (আইজি প্রিজন্স) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন জানান, সুজন ‘সূর্যমুখী ভবনের’ সাধারণ একটি কক্ষে দুই সহবন্দির সঙ্গে ছিলেন। সেদিন সকালেই তিনি নাশতা করেছিলেন। ওই সময় একজন সহবন্দি আদালতে ছিলেন এবং অন্যজন ঘুমাচ্ছিলেন। সে সুযোগেই জানালার গ্রিলের সঙ্গে নিজের গামছা পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেন সুজন।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও অতীত কর্মকাণ্ড
সাইদুর রহমান সুজনের নাম দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত ও বিতর্কিত। ২০২৪ সালের শেষ দিকে ছাত্র-জনতার বৃহৎ গণআন্দোলনের সময় সাভারে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে গুলি ছুড়তে দেখা যায় তাকে। সেই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
জানা যায়, ওই ঘটনার পর তার বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা ও দমনপীড়নের’ অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালসহ বিভিন্ন থানায় ১৫টির বেশি মামলা দায়ের হয়। এছাড়া, বিরুলিয়া এলাকায় জমি দখল, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও তার জড়িত থাকার একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর বিরুলিয়া ইউনিয়নের কাকাবর এলাকায় চাঁদাবাজির অভিযোগে তাকে প্রথমবারের মতো গ্রেপ্তার করা হয়। তবে প্রভাব খাটিয়ে তিনি তখন জামিনে ছাড়া পান।
আত্মগোপন ও গ্রেপ্তার
২০২৫ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর দলটির অনেক নেতার মতো তিনিও আত্মগোপনে চলে যান। তবে চলতি বছরের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে রাজধানীর উত্তরার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারের পর থেকেই তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিলেন।
আত্মহত্যার কারণ ও তদন্ত
সুজনের আত্মহত্যাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং সাধারণ মানুষের মাঝে নানা প্রশ্ন উঠেছে। কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, তার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কারণে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। তবে একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে কারা কর্তৃপক্ষ কীভাবে এমন আত্মহত্যা ঘটলো, সেটি তদন্ত করে দেখতে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন আইজি প্রিজন্স।
সাইদুর রহমান সুজনের উত্থান যেমন হঠাৎ ও দাপুটে ছিল, তার পতনও তেমনি করুণ ও নিন্দনীয়। যারা একসময় আগ্নেয়াস্ত্র হাতে সাধারণ মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছিলেন, ইতিহাস তাঁদের শেষ কেমন হয়—তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই ঘটনা।
প্রতিবেদন: নুর আলম সিদ্দিকী মানু
স্টাফ রিপোর্টার📰 বাংলা ৫২ নিউজ | ১৫ জুন ২০২৫
(যাচাই করা সূত্র: কারা অধিদপ্তর, ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ি, সংবাদ সংস্থা রিপোর্ট)।