Friday , 10 May 2024
শিরোনাম

বিনা লাইসেন্সে কয়েক বছর ধরেই ব্যবসা করছিল সেই ডিসিএস

কোনো ধরনের অনুমোদন ছাড়াই ডিসিএস অর্গানাইশেন নামে পেস্টি সাইডের (বালাইনাশক) প্রতিষ্ঠানটি খোলেন আশরাফুজ্জামান ও ফরহাদুল আমিন। বাসা, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে কীটপতঙ্গ সমূলে উৎপাটন করা হয়-এরকম গ্যারান্টি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন প্রচার করে ডিসিএস অর্গানাইজেশন।

অনলাইনে তাদের কাছে অর্ডার আসে। এরপর সেখানে তাদের কর্মচারী পরিদর্শন করে কীটপতঙ্গ মুক্ত করার জন্য বিল জানায়। সাধারণত ১৫শ’ থেকে ২ হাজার বর্গফুটের স্পেসের জন্য গড়ে ১৫ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা বিল হয়। এরপর তাদের কর্মচারীরা এলুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেড (গ্যাস ট্যাবলেড) দিয়ে কীটপতঙ্গ বিনাশ করে। এভাবেই চলছিল ডিসিএস অর্গানাইজেশনের বালাইনাশকের (পেস্টিসাইডস) কাজ।

সারাদেশে এরকম হাজার হাজার পেস্ট কন্ট্রোলার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেরই নেই কোনো ঠিকানা। সোস্যাল মিডিয়ায় অথবা রাস্তার ধারে সাইনবোর্ড টানিয়ে বা দেয়ালে দেয়ালে মোবাইল নম্বর দিয়ে পেস্ট কন্ট্রোলারের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ডিসিএস অর্গানাইজেশনের চেয়ারম্যান আশরাফুজ্জামান ও এমডি ফরহাদুল আমিন পুলিশি রিমান্ডে এমন তথ্যই জানিয়েছেন।

গত ৪ জুন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন তুষারের নতুন ফ্ল্যাটে তেলাপোকা নিধনের জন্য গ্যাস ট্যাবলেড ব্যবহার করায় বিষক্রিয়ায় দুই ছেলে শায়ান মোবারত (১৫) ও শাহির মোবারত (১০) মারা যায়। ওই ঘটনায় মোবারক হোসেন বাদী হয়ে ভাটারা থানায় ডিসিএস অর্গানাইজেশনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় পুলিশ প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান, এমডি ও টেকনিশিয়ানকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়।

ভাটারা থানার ওসি এবিএম আসাদুজ্জামান জানান, ডিসিএস অর্গানাইজেশনের পেস্ট কন্ট্রোলারের বিষয়ে কোনো অনুমোদন নেই। বিনা লাইসেন্সে প্রতিষ্ঠানটি কয়েক বছর ধরে ব্যবসা করছে। প্রতিষ্ঠানটিতে টেকনিশিয়ান নিয়োগ করা হয়নি। নেই কোনো চিকিৎসক। এমনকি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কোনো অনুমোদন নেই।

গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে পাওয়া তথ্যের বরাতে ওসি বলেন, গুগল ঘেঁটে পেস্ট কন্ট্রোলিংয়ের তথ্য নিয়ে হাজার হাজার পেস্ট কন্ট্রোলার প্রতিষ্ঠান অনুমোদন ছাড়াই চলছে। আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগের খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি যে, এলুমিনিয়াম ফসফাইড বা গ্যাস ট্যাবলেড বাসা-বাড়ি বা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহারের কোনো নিয়ম নেই। খাদ্য গোডাউন বা ফসলের মাঠে এই গ্যাস ট্যাবলেড ব্যবহার করা হয়। বাসা-বাড়িতে বিভিন্ন ধরনের তরল কেমিকেল স্প্রে করতে হয়। নির্দিষ্ট মাত্রার কেমিকেল দিয়ে তরল তৈরি করার নিয়ম রয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের অজ্ঞতার কথা স্বীকার করেছেন। এজন্য এই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে দন্ডবিধি ৩০৪ এর ক ধারায় অবহেলাজনিত কারণে মৃত্যুর অভিযোগ দিয়ে দ্রুত চার্জশিট দেয়া হবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের খামাবাড়িতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা বালাইনাশক প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়ে থাকে পেস্ট কন্ট্রোলারের জন্য। বাসা-বাড়ি, প্রতিষ্ঠান, ফসলের মাঠ ও শষ্যের আড়ত বা খাদ্য গুদামে বালাইনাশক করার জন্য ১১৮টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিয়েছে উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা। পেস্ট কন্ট্রোলারের লাইসেন্স পেতে ১৬টি শর্ত মানতে হয়। অত্যন্ত কড়াকাড়ি এই শর্ত অনেকেই পালন করতে পারেন না বলে এ পর্যন্ত সাত শতাধিক আবেদনের কোনো লাইসেন্স দেয়া হয়নি।

উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখার শর্তগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, ওই প্রতিষ্ঠানে একজন চিকিৎসক নিয়োগ দিতে হবে। থাকতে হবে একজন সার্টিফিকেটধারী টেকনিশিয়ান। প্রতিষ্ঠানটিতে কেমিকেল রাখার জন্য ফায়ার সার্ভিসের অনুমোদন নিতে হবে। যাদেরকে নিয়োগ দেয়া হবে-তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অনাপত্তিপত্রও জমা দিতে হবে।

২০১৮ সালের বালাইনাশক আইনে বলা আছে, কোনো ব্যক্তি লাইসেন্স ছাড়া বালাইনাশক আমদানি, উৎপাদন, পুনরুৎপাদন, মোড়কজাতকরণ, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি পরিচালনা, বিজ্ঞাপন প্রচারসহ কোনো কাজই করতে পারবে না। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাসায় কীটনাশক প্রয়োগে বিষক্রিয়ায় দুই শিশুর মৃত্যুর পর উদ্ভিদ সংরক্ষণ শাখা সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারণা চালাচ্ছে। অনুমোদনবিহীন পেস্ট কন্ট্রোলার প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চেয়েছে।

Check Also

বিএনপি নেতৃবৃন্দের বক্তব্য অসংলগ্ন ও বিভ্রান্তিকর: কাদের

বিএনপি নেতৃবৃন্দের বক্তব্যকে অসংলগ্ন, লাগামহীন ও বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x