Friday , 10 May 2024
শিরোনাম

৫ সিটিতে গড়ে ২৫% ভোটার ভোট দেননি

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে অনুষ্ঠিত পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি ছিল রাজশাহী সিটিতে।গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের যে আমেজ দেখা গিয়েছিল সেটা খুলনা ও বরিশালের নির্বাচনে গিয়ে হোঁচট খায়। বিশেষ করে বরিশালে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর ওপর হামলার পর তৈরি হয় নতুন শঙ্কা। ফলে গাজীপুরের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ভোটারের আস্থা ফেরানোর চেষ্টার যে আভাস দিয়েছিল সেটিতে শতভাগ অর্জন করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ভোটারদের মধ্যে ভোট দেওয়ার আগ্রহ দেখা গেলেও নানা কারণে এবার ভোটের হারে পরিবর্তন এসেছে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত পাঁচটি নির্বাচনে যে পরিমাণ ভোট পড়েছে তা আগের তিন বছরের গড় হিসাবের প্রায় ২৫ শতাংশ কম। অর্থাৎ ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত ওই সিটি নির্বাচনগুলোতে প্রায় ২৫ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে এবার কেন্দ্রে যাননি। এর কারণ হিসেবে নির্বাচনে সব দল না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আর নির্বাচন কমিশন বলছে, ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে তারা শতভাগ আন্তরিক ছিলেন।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার ছিল ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭৫৩ জন। নির্বাচন কমিশন বলছে, ২১ জুন হওয়া নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন শতকরা ৪৬ শতাংশ ভোটার। আর গত তিনটি নির্বাচনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত চারবার নির্বাচন হয়েছে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী বদরউদ্দিন আহমদ কামরান আনারস প্রতীকে জয়ী হয়েছিলেন। সে সময় ভোট পড়েছিল ৭৫ শতাংশ। ২০১৩ ও ২০১৮ সালে বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী যখন জয়ী হন তখন ভোট পড়েছিল যথাক্রমে ৬২ শতাংশ ও ৬৩ শতাংশ। গত তিন বছরের ভোটার উপস্থিতি বিবেচনায় এবার গড়ে এখানে ২০ শতাংশেরও বেশি ভোটার কেন্দ্রে যাননি ভোট দিতে।

১৯৮৭ সালের ১ আগস্ট রাজশাহী সিটি করপোরেশনের যাত্রা শুরু হয়। রাজশাহী সিটি নির্বাচনে এবার ভোটার ৩ লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন। এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন তৃতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশনের তথ্য মতে, এই নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫৬.২০ শতাংশ।

রাজশাহীতে ২০০৮ সাল থেকে গত তিনটি নির্বাচনের ভোট পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৮ সালে ভোট পড়ার হার ছিল ৮১.৬১ শতাংশ। ২০১৩ সালে ৭৬.০৯ শতাংশ ও ২০১৮ সালে ৭৮. ৮৬ শতাংশ। তিন বছরের গড় হিসেবে এবার ভোটার কমেছে প্রায় ২২.৬৬ শতাংশ।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৪৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ, যা গত তিনটি নির্বাচনের মধ্যে সবচেয়ে কম। ২৬ মে রিটার্নিং কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৩ জন ভোটারের মধ্যে ৫ লাখ ৭৫ হাজার ৫০ জন ভোট দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার তথ্য মতে, ২০১৮ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে এই সিটিতে ভোট পড়েছিল ৫৮ শতাংশ, তার আগে ২০১৩ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৬৮ শতাংশ। গত দুই বছরের গড় হিসেবে ভোট কম পড়েছে প্রায় ৩৮ শতাংশ।

১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে ৫১.৪৬ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর। এবার ভোটার ছিল ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৯৮ জন। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৮ সালে ভোট পড়ে ৮১.৯৯ শতাংশ। ২০১৩ সালে এ সিটিতে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ১১ হাজার ২৫৭ জন। ভোট পড়ে ৭২.১ শতাংশ। ২০১৮ সালে বরিশাল সিটিতে ভোটার ছিল ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন। ভোট পড়ে ৫৫ শতাংশ। এই নির্বাচনে ১২৩টি কেন্দ্রের মধ্যে গোলযোগ ও অনিয়মের কারণে ১৬টি কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত হওয়ায় ৩০ জুলাই ভোটের দিন মেয়র প্রার্থী কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করেননি রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে দুই দফা তদন্ত শেষে ৩ অক্টোবর সাদিককে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। তিন বছরের গড় হিসেবে ১৮.৫ শতাংশ ভোটার কেন্দ্রে যাননি।

অন্যদিকে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৪২ থেকে ৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন। এতে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ জন ভোটার ছিল।১৯৮৪ সালের ১০ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশন হয়। ২০১৮ সালে প্রায় পাঁচ লাখ ভোটারের এ সিটিতে ভোট পড়ার হার ছিল প্রায় ৬২ শতাংশ। ২০১৩ সালে ৪ লাখ ৪০ হাজার ৫৬৬ জন ভোটারের মধ্যে ৩ লাখ ২ হাজার ৫১৯টি ভোট পড়ে। ভোটের হার ছিল ৬৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। আর ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভোট পড়ে ৭৭.৮০ শতাংশ। এখানে গড় হিসেবে এবার প্রায় ২৪ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে যাননি।

জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ দেশ রূপান্তরকে বলেন, পরিবেশ তুলনামূলকভাবে ভালো থাকায় ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে গেছেন। তবে ভোটার আরও বেড়ে যেত যদি দেশের প্রধান বিরোধী দলগুলো অংশ নিত। এই সিটিগুলোর আগের নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বেশি থাকার কারণও সব দলের অংশগ্রহণ।

জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব হলো সুষ্ঠু নির্বাচন করা। এজন্য যা করা দরকার সবই আমরা করার চেষ্টা করেছি। সিটি নির্বাচনগুলোতে বড় ধরনের কোনো সহিংসতা ছাড়া অনুষ্ঠিত হওয়ায় সবাই খুশি। গাজীপুর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত পাঁচ সিটিতে ৫০ শতাংশেরও বেশি ভোট পড়েছে। সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হলে, বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক কিছু কারণ না থাকলে ভোটার উপস্থিতি হয়তো আরও বাড়ত।’

Check Also

উপজেলা নির্বাচন: কেন্দ্রে থাকবে সর্বোচ্চ পুলিশ-আনসার

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

x